বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল বুধবার।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে নৃশংসভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।
আবরারের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্মরণসভা, দোয়া মাহফিল, চিত্রপ্রদর্শনী, স্মৃতিচারণ, সংগীত, আবৃতি, পথনাট্য, বক্তৃতা, মানববন্ধন ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ।
বৃহস্পতিবার বুয়েটে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজে (বুয়েটিয়ান) এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আজ সারাদিন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।
অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে দুটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে আজকের আয়োজন।
প্রথম পর্বটি সকাল ১০টায় বুয়েট অডিটরিয়ামের সামনে থেকে শুরু হবে। এই পর্বে ইন্টারভিউ, লাইভ পেইন্টিং প্রদর্শনী, স্মৃতিচারণ, সংগীত, আবৃতি, পথনাট্য, বক্তৃতা, মানববন্ধন ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে। বাদ আসর বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে এই পর্বের সমাপ্তি হবে।
দ্বিতীয় পর্বটি অনলাইনে হবে। সেটি ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করা হবে। এতে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক, উপউপাচার্য, উপাচার্য ও শিক্ষকরা বক্তব্য দেবেন।
এ ছাড়া পুরো আয়োজনকে প্রাণবন্ত করতে বুয়েটের বিভিন্ন ক্লাব তাদের বিশেষ পরিবেশনা করবে।’
অপর এক ঘোষণায় ‘বুয়েটিয়ান’ পেজে বলা হয়, ‘আবরারের দ্বিতীয় শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাঁধন, বুয়েট জোনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাঁধন, বুয়েট জোন রক্তের প্রয়োজনে যোগাযোগ করবে। ঢাকা মেডিকেলসহ আশপাশের হাসপাতাল থেকে কোনো ব্লাডের জন্য খোঁজ এলে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতে হওয়া চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ।
এর জের ধরে ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় সব মিলিয়ে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট তৈরি করে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ।
এর পর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও সোচ্চার হন।
সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি। এখন এই মামলার বিচারে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। আগামী ২০ অক্টোবর মামলায় পরবর্তী তারিখ রয়েছে।
১৯৯৮ সালের ১৩ মে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবরার ফাহাদ। আবরার প্রথমে কুষ্টিয়া মিশন স্কুল ও জেলা স্কুলে লেখাপড়া শেষ করে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ তিনি বুয়েটে ভর্তি হন।