চারিদিকে চলছে এখন পূজার প্রস্তুতি। আর পূজার প্রস্তুতির মধ্যে অন্যতম পোশাক। পূজার পোশাক মানেই এখন আর শুধু শাড়ি-সালোয়ার-কামিজ, ধুতি-পাঞ্জাবি নয়। এসব ছাড়াও টপস, কুর্তি, ফতুয়া, শার্ট, ওয়েস্টার্ন, ফিউশন সব ধরনের পোশাকই এখন পূজার পোশাকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, একইরকম নকশায় যুগল পোশাক, ফ্যামিলি পোশাক-এই ট্রেন্ডগুলোও এখন জায়গা করে নিয়েছে পূজার আমেজে।

দিনগুণে পূজার পোশাক

এবার পূজার সময়টা যেহেতু দিনে গরম আর রাতে হালকা শীতের আমেজে, তাই এ সময় পূজার পোশাক নির্বাচনে আরামের দিকটাতে নজর দিতে হবে। শারদীয় দুর্গাপূজা বেশ কয়েকদিন ধরে চললেও ষষ্ঠী থেকে দশমী এ পাঁচ দিন সাজপোশাকের আয়োজনটা থাকে জোড়ালো। ষষ্ঠী এবং সপ্তমী পূজা শুরুর দিকে হওয়ায় এ দুই দিন সাধারণত সবাই হালকা স্নিগ্ধ সাজপোশাক বেছে নেন। সকালে মণ্ডপে অঞ্জলি দিতে যাওয়ার সময় শাড়ি, সালোয়ার কামিজ যে কোনোটাই পরতে পারেন। সন্ধ্যায় ভালো লাগবে সিল্কের হালকা নকশার মিষ্টি রঙা পোশাক। ছেলেরা পরতে পারেন সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবি-পায়জামা কিংবা ট্রাউজার, ফতুয়া। অষ্টমী পূজায় অঞ্জলি বিশেষভাবে পালন হয় এবং এদিন কুমারী পূজা হওয়ায়। তাই সবাই চায় এদিন একটু জমকালো সাজপোশাক পরতে। অষ্টমীতে বেনারসি, কাতানের মতো ভারি শাড়ি পরতে পারেন। সালোয়ার-কামিজ পরলেও একটু ভারি কাজের নকশা বেছে নিন। ছেলেদের এদিন তসর, বলাকা সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক, অ্যান্ডি সুতি পাঞ্জাবি বেশ মানায়। নবমীতে মেয়েরা পরতে পারেন সালোয়ার-কামিজ, গাউন, লং স্কার্ট প্রভৃতি। ছেলেদের ভালো লাগবে পাঞ্জাবি। তবে এ দিনটিতে পায়জামার বদলে ধুতি কিংবা প্যান্ট পরলে লুক চেঞ্জ হবে। দশমীতে সবাই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে। তাই গাঢ় রঙের সাজপোশাক বেছে নিন। দশমীতে লাল শাড়ি, সাদা শাড়ি লাল পাড়ের ঐতিহ্য লক্ষ করা যায়। তবে সাদা শাড়ি লাল পাড়ই যে পরতে হবে এমনও কোনো কথা নেই। জমিনে হালকা কাজ, ভারি আঁচলের কাতান, বেনারসিও চলতে পারে। রঙের ক্ষেত্রে কালচে মেরুন, ম্যাজেন্টা, সোনালি ভালো লাগবে। ছেলেরা এদিন ধুতি পরে বৈচিত্র্য আনতে পারেন। ধুতির সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারেন রাজকীয় মোটিফের পাঞ্জাবি। রাতে ফরমাল শার্ট-প্যান্ট, একরঙা পাঞ্জাবির সঙ্গে প্রিন্স কোট পরে বাজিমাত করতে পারেন।

আজও স্বতন্ত্র, অমলিন শাড়ি

আধুনিকা হাজারো নকশার পোশাকের ভিড়ে শাড়ি আজও স্বতন্ত্র, অমলিন। আর দুর্গোৎসবে শাড়ির সাজ চিরন্তন। ঐতিহ্যবাহী গরদের সাদা জমিনে লাল পাড়ের শাড়ির পাশাপাশি ভিন্নতা আনতে পূজার শাড়িতে এখন ডিজাইনাররা শরতের নীল, সবুজ, লাল, কমলাসহ বিভিন্ন রং ব্যবহার করছেন। জনপ্রিয় এখন দেশি সিল্ক, সুতি, মসলিন, জামদানি, কাতান শাড়ি। শঙ্খ, দুর্গা মায়ের গহনা, পদ্ম, ওম, অস্ত্র প্রভৃতি মোটিভ ব্যবহার হয়েছে পূজার শাড়িতে। নকশা ফুটিয়ে তুলতে এবার স্ক্রিন প্রিন্ট এবং হ্যান্ড অ্যাম্ব্র্র্রয়ডারির ব্যবহার বেশি হয়েছে। এ ছাড়া টাই-ডাই, অ্যাপলিক, মেশিন অ্যাম্ব্রয়ডারি, আড়িও নান্দনিক রূপে এসেছে শাড়ির নকশায়। পূজার শাড়ির সঙ্গে বেশ মানায় থ্রি-কোয়ার্টার হাতা, ঘটি হাতা, টিউলিপ হাতা, লম্বা হাতায় কুঁচি দেওয়া নকশার ব্লাউজ।

পূজার পাঞ্জাবি

পাঞ্জাবি ছাড়া পূজা যেন ভাবাই যায় না। প্রতি বারের মতো এবার পূজাতেও পাঞ্জাবির কাটছাঁট, ডিজাইন আর কলারে এসেছে পরিবর্তন। লং প্যাটার্নের পাশাপাশি সেমি লংও চলছে। রেগুলার ফিটের পাশাপাশি স্লিমফিট এখন ফ্যাশনেবল। পাঞ্জাবির গলায় এবার ব্যান্ড কলার, শার্টের কলার ছাড়াও সাদামাটা কাট চোখে পড়বে।

শেরওয়ানি গলার পাঞ্জাবি এখন অনেকেরই পছন্দ। সুতার কাজ ছাড়াও ভিন্ন কাপড়ের প্যাঁচওয়ার্ক, মেশিন অ্যাম্ব্রয়ডারি, ব্লক বেশ চলছে। স্ট্রাইপ ও প্রিন্ট পাঞ্জাবিও রয়েছে। পূজা কিছুটা গরম আর বৃষ্টির সময়টাতে হওয়ায় পাঞ্জাবির কাপড় যাতে আরামদায়ক হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

কুর্তি-কামিজে নতুনত্ব

মেয়েদের পূজার পোশাকে এবার শুধু সিঙ্গেল বা থ্রি-পিস নয়, ফোর পিসও নজর কাড়বে। ভারি কাজের লং ফোর পিসগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকটা কামিজের আদলে তৈরি নতুন প্যাটার্নের গাউনও নজর কাড়ছে। নতুন নকশার এ গাউনগুলোর ওপরে আলাদাভাবে কলার দেওয়া শর্ট কোটি ব্যবহার করা হয়েছে। জর্জেটের টিউনিকও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোল গলা, ল্যান্টার্ন হাতা, উঁচু-নিচু ছাঁটে কাটা হেম আর পিনটাকের কাজের এ টিউনিকগুলোতে ফ্লোরাল মোটিফের পাশাপাশি আল্পনা ধাঁচের নকশা করা হয়েছে। প্যাঁচওয়ার্কের কাজ করা লম্বা ধাঁচের কোটিতে নতুনত্ব পাওয়া যাবে। এর সঙ্গে বেল্ট দিয়ে স্টাইল করে পরলে গর্জিয়াস লুক আসবে। মিডি কামিজ কিংবা ফ্রক কুর্তির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে তরুণীদের। পূজার কালেকশনে মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পোশাকে লাইন, সিমেট্রিক, অ্যাসিমেট্রিক প্যাটার্নে তৈরি হয়েছে। বরাবরের মতো অধিকাংশ হাতা ঢোলা এবং ছড়ানো স্টাইলে করা হয়েছে। ফেব্রিক হিসাবে ব্যবহার হয়েছে সুতি, ভয়েল, লিনেন, জর্জেট, সফট সিল্ক ছাড়াও বিভিন্ন রকম অর্নামেন্টেড কাপড়। পূজায় শুধু যে দেশীয় ঘরানার সাজপোশাকই পরতে হবে, সেই ধারা ভেঙেছে অনেক আগেই। দুর্গোৎসবে অনেকেই এখন প্রতিদিন শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ না পরে দু’একদিন ফিউশন পোশাক পরেন।

ক্যাজুয়ালে নজরকাড়া

ছেলেরা ষষ্ঠী থেকে নবমীতে পরতে পারেন ক্যাজুয়াল পোশাক। ক্যাজুয়াল পোশাকের মধ্যে গোল গলা ও কলার দুই ধরনের টি-শার্টই এখন চলছে। একরঙা ও চেকের টি-শার্টেরও কদর বেশ। চাইলে যে কোনো পূজায় দুপুরে বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় কিংবা পূজামণ্ডপে ঘোরার সময় টি-শার্ট, শার্ট, ফতুয়া পরা যায়। এখন ব্লক, বাটিক, স্কিনপ্রিন্টসহ নানা ধরনের কাজ হচ্ছে টি-শার্টগুলোতে।

বয়স্কদের পূজার পোশাক

বয়স্কদের জন্য হালকা রং নকশার আরামদায়ক ফেব্রিকে তৈরি করা হয়েছে পূজার পোশাক। বিভিন্ন ধরনের সুতি শাড়ি, তাঁতের শাড়ি, সিল্ক শাড়িতে চিকন পাড়ে হালকা রং নকশা যেমন চোখে পড়বে তেমনি চওড়া পাড়ের শাড়িও আছে। তবে বয়স্কদের শাড়ির পাড় হালকা রাখা হয়েছে। নকশায় তুলে আনা হয়েছে পূজার পটভূমিতে তৈরি বিভিন্ন মোটিভ। পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে আরামদায়ক ফেব্রিক এবং লুজ ফিটিংয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কলারে চিকন কাজ হালকা রং ব্যবহার হয়েছে। শার্টে ব্যবহার হয়েছে পূজার বিভিন্ন মোটিভ।

শিশুর পোশাকে স্টাইলিশ লুক

শিশুদের জন্য নানা ধরনের স্টাইলিশ পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। আরাম পেতে সুতি কাপড়ে তৈরি হয়েছে অধিকাংশ পোশাক। রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য অ্যালাইন কাট, হাতাকাটা পোশাক ছাড়াও ঘটি হাতার ফ্রক, টপসের কালেকশন বেড়েছে। পার্টির জন্য কিনতে পারেন অ্যান্ডি সিল্ক, জর্জেট, লিনেনের ফ্রক, স্কার্ট, গাউন। ছেলে শিশুদের শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, কাতুয়ায় প্রাধান্য পেয়েছে শর্ট ও ফুল স্লিভ। সাদা পাঞ্জাবির পাশাপাশি ভাইব্রেন্ট কালারের পাঞ্জাবি রাখা হয়েছে।

আছে ফ্যামিলি পোশাক

বিভিন্ন উৎসবে এখন একই নকশার পোশাকে পরিবারের সবাই সাজার সুযোগ রয়েছে। বরাবরের মতো বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ এবারও পূজা উপলক্ষ্যে নিয়ে এসেছে দারুণ সব ডিজাইনের পূজার পোশাক। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের পোশাক সব ড্রেসেই একই মোটিভে নকশা করা হয়েছে এসব পোশাকে। গতবারের মতো এবারও পূজা উদযাপিত হতে যাচ্ছে করোনা মহামারির মধ্যেই। তাই কেনাকাটার ক্ষেত্রে এবং পরে পূজামণ্ডপে ঘুরে বেড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। জমকালো পোশাক আর ভরপুর সাজগোজ করলেও অবশ্যই মাস্ক পরুন।