পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার থেকে অবৈধ অস্ত্র, মাদক, মানবপাচার ও চোরাচালান রোধে প্রয়োজনে সীমান্তে গুলি চালানো হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আশাকরি এসব অপরাধ রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে দেখছে বাংলাদেশ। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভারত সরকারের উপহারের অ্যাম্বুলেন্স প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এ দিন সকালে একদিনের সফরে সিলেট আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সকাল ১০টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাকালে ভারত সরকারের উপহার ২টি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাই স্বামীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠান শেষে দুটি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন ভারতীয় হাইকমিশনার। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে- সাম্প্রতিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য উল্লেখ করে এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ধরনের কূটনৈতিক আলোচনা হচ্ছে কি-না; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ বর্ডারে কখনো গুলি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। সীমান্তে হত্যা বন্ধে খুবই আন্তরিক বাংলাদেশ। কিন্তু এ সীমান্তে অপরাধ বাড়ছে দিন দিন। সংঘটিত অপরাধ নিয়ে কথা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। অপরাধ ঠেকাতে আগামীতে প্রয়োজনে গুলি চালানো হবে। তখন বন্ধ করা যাবে মানবপাচার, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধ।

এ সময় সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, আমরা বর্ডারে কাউকে মারি না। মাঝে মধ্যে প্রতিবেশী দেশের হাতে এক-দুজন মারা গেলে মিডিয়া আমাদের জান শেষ করে দেয়। কেউ মরলে মিডিয়ায় চিৎকার শুরু হয়। বাংলাদেশ-ভারত নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্ডারে একটি লোকও মরবে না।

মিয়ানমার বর্ডারে গুলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও ভালো বলতে পারবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বর্ডারটি খুবই ‘ডিফিকাল্ট’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ রোহিঙ্গা এসেছিল। আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নেয়। ১৯৯২ সালে এসেছিল ২ লাখ ৫৩ হাজার। এর মধ্যে ফিরে গেছে ২ লাখ ৩৬ হাজার। বাকিদের আশ্রয় দেয় ইউএনএইচসিআর। এবারের সংখ্যা অনেক বেশি। ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এদের তাদের দেশে ফিরিয়ে দিতে কাজ করছি আমরা। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন এজেন্সি এদের এখানে দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, চার বছর ধরে রাখাইনে কোনো মারামারি নেই। শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। কিন্তু ওরা রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার কথা বলে না। উল্টো এখানে তাদের কীভাবে ভালো রাখা যায়, তাদের হিউম্যান রাইটস- এসব অবান্তর কথা বলছে। তারা বলছে- রোহিঙ্গাদের জমির অধিকার দিতে, চাকরিতে বৈষম্য না করতে। তারা আমাদের শর্ত দিতে চায়। আসল কথা হচ্ছে, রোহিঙ্গারা এখানে দীর্ঘদিন থাকলে তাদের চাকরিও দীর্ঘায়িত হবে। এদের জন্য অনেকে অর্থ বরাদ্দ দেন, কিন্তু সে টাকা কীভাবে খরচ হয় সেটাও জানি না আমরা।

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ খুন হওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে ছেলেটা মারা গেছে সে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে কাজ করছিল। সে রোহিঙ্গাদের বোঝানোর চেষ্টা করছিল, এখানে নয়, তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিজ দেশেই। তাই তাদের রাখাইনে ফিরে যেতে হবে। এ আন্দোলন করতে গিয়েই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে।