করোনা কমেনি। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ায় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে জনজীবন। জমে থাকা প্রয়োজনীয় কাজ, শপিং, ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও ঘরোয়া বিয়ে, গেট টুগেদার, পার্টিসহ বিভিন্ন ছোটখাটো অনুষ্ঠানের দাওয়াত পড়তে শুরু করছে। পার্টি মানেই জবরজং সাজ এমন ধারণা এখন সেকেলে। এই রোদ-গরম, তো চোখ ফেরাতেই মেঘে মেঘে গোমড়া আকাশের এ সময়টাতে হালকা সাজেই ফুটে উঠবে সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতা। তাই হালকা পোশাকের সঙ্গে হালকা সাজ-এমনটাই থাকুক এ সময়ের পার্টিলুক।

প্রখর রোদ দেখে ঘর থেকে বের হলেও যে কোনো সময় এক পশলা বৃষ্টির ছাটে কাকভেজা হয়ে যেতে পারেন এখন। স্বস্তিতে থাকতে এবং সাজ পোশাক সুরক্ষিত রাখতে এখন পার্টি কিংবা যে কোনো অনুষ্ঠানে হালকা সাজ এবং গহনা বেছে নিন। পোশাক নির্বাচনে লক্ষ রাখুন তা যেন জবরজং না হয়। ভারী কাজের পোশাক বৃষ্টিবাদলের সময়টাতে আপনাকে শুধু অস্বস্তিতেই রাখবে না ভিজে গেলে শুকাতেও সময় নেবে। তাই লক্ষ রাখুন এ সময় পোশাকের নকশা এবং ফেব্রিক দুটিই যেন হালকা পাতলা হয়। তাই বলে একেবারেই যে সাদামাটা পোশাক পরতে হবে তা কিন্তু নয়। বরং পোশাকে উজ্জ্বল রং আর হালকা নকশা ও প্রিন্টের মাধ্যমে নিয়ে আসুন বৈচিত্র্য। ফেব্রিক নির্বাচন করুন সুতি কিংবা জর্জেট। পার্টি লুক আনতে চাইলে অ্যান্ডি সিল্কের পোশাক পরা যেতে পারে।

রোদ আর বৃষ্টিবাদলে মুখের সাজ হালকা হলেই ভালো। বাইরে বের হওয়ার আগে সবার প্রথমেই ফেসওয়াশ বা ফোমিং কেèনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। এরপর আলত করে মুখ মুছে মুখে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম লাগিয়ে চার থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন। এর ফলে সানস্ক্রিন ত্বকে ভালোমতো মিশে যাবে। সানস্ক্রিন লাগানোর আগে বা পরে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর প্রয়োজন নেই। এবার মুখে ফেস পাউডার বা মিনারেল পাউডার মাখুন। তাহলে বৃষ্টিতে ভিজলেও খুব বেশি সমস্যা হবে না। ফাউন্ডেশন যদি ব্যবহার করতেই চান তাহলে হালকা হলদে ধরনের কমপ্যাক বা ফাউন্ডেশন লাগাতে পারেন। এতে ত্বকের স্বাভাবিক ভাবটা বজায় থাকবে। চোখে আইশ্যাডোর পরিবর্তে নীল, সবুজ বা ছাই রঙের কাজলের রেখা টেনে দিতে পারেন। হালকা সাজেও নজরকাড়া লাগবে। কিংবা ওয়াটারপ্রুফ লাইনার বা কাজল দিয়ে চোখে লাইন করে নিয়ে মাশকারা দিয়ে নিন। কোরাল, ব্রোঞ্জ বা বিভিন্ন হালকা রঙের লিপস্টিক এ সময়ের জন্য পারফেক্ট।

রাতের পার্টিতে একটু ভারী মেকআপ না হলেই নয়। সেক্ষেত্রে আপনি পোশাকটা উজ্জ্বল রঙের পরতে পারেন। সাজে চমক আনতে সাজাতে পারেন চোখ কিংবা ঠোঁট। সাজের বেইজ দিনের মতো হালকাই রাখুন। পার্টি লুক আনতে ব্যবহার করতে পারেন বিবি ক্রিম। চাইলে রাতে লিকুইড ফাউন্ডেশন দিয়েও বেইজ করতে পারেন। শিমার লাগাতে পারেন। এরপর ফেস পাউডার দিন। ব্লাশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন পিংক, ব্রাউন টোনের ব্লাশন। চোখে বাদামি, কফি, নীলচে বা সবুজ আভার আইশ্যাডো ভালো লাগবে। গরম কিংবা বৃষ্টিতে শ্যাডো গলে যাওয়া প্রতিরোধে প্রথমেই প্রাইমার লাগিয়ে নিন। চোখের সাজে আমরা সাধারণত কাজল, আইলাইনার এবং মাশকারা ব্যবহার করি। গরমে এর সবক’টি আইটেম ব্যবহার না করে যে কোনো একটি বা দুটিও ব্যবহার করতে পারেন। আবার শুধু মাশকারাতেও চোখ আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। সঙ্গে হালকা আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। সারা মুখে মেকআপ না করেও নজর কাড়তে পারেন একটা দারুণ শেডের লিপস্টিক দিয়ে। এ সময় ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিকই বেশি মানায়।

এখন চুল খুব বেশি টেনে না বাঁধাই ভালো। এতে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে সহজে শুকাতে চাইবে না। আবার চুল খোলা রাখাও আরামদায়ক হবে না। চুল লম্বা কিংবা মাঝারি হলে হাতখোঁপা করে কানের কাছে ছোট কোনো বর্ষার ফুল গুঁজে দিতে পারেন। ভিন্নতা আনতে ফেঞ্চ বেণি, লুজ বেণিও করা যেতে পারে। ফন্ট টুইস্ট করে পেছনে এলোখোঁপা কিংবা বেণিও বানাতে পারেন।

বর্ষাকালে খুব ভারী জুয়েলারি পরতে যাবেন না। হালকা-পাতলা গহনা বেছে নিন। তবে তা পোশাকের সঙ্গে মানানসই হতে হবে। সুতি পোশাকের সঙ্গে ভালো যায় পুঁতি, রুপা, মেটাল, বিডসের গহনা। জর্জেটের সঙ্গে মানাবে পুঁতি, জাঙ্ক, কাচ কিংবা জয়পুরি গহনা। সিল্ক, অ্যান্ডি ধরনের পোশাকের সঙ্গে ভালো লাগে মেটাল, গোল্ড, গোল্ড প্লেটেড, পার্ল জুয়েলারি। পানিরোধী না হলে, বর্ষাকালে ধাতব গহনা এড়িয়ে চলুন। এ সময়ের জন্য মাটি, কাঠ, কাপড় কিংবা পাটের গহনাও উপযোগী নয়।

হালকা সাজে মেনে চলুন

* প্রথমেই স্কিন টোনের সঙ্গে ম্যাচ করে লাইট বেজ কালার ব্যবহার করুন।

* ফ্লোরাল পোশাকের সঙ্গে লাইট টোনের যে কোনো একটি শেডের আইশ্যাডো মানায়। পিংক, ব্রাউন টোনের শ্যাডো ট্রাই করতে পারেন। ভালো লাগবে।

* গরমে নিউট্রাল শেডের আইশ্যাডো বেশি মানানসই।

* চোখ ও ঠোঁটের মেকআপে ব্যালেন্স করতে পারলে মেকআপ উগ্র হবে না। এক্ষেত্রে পারফেক্ট মেকআপ ব্যালেন্স হচ্ছে চোখে হালকা মেকআপ করলে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেওয়া, আর চোখে গাঢ় মেকআপ করলে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দেওয়া।

* বৃষ্টিবাদলায় সাজের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখুন সব ধরনের প্রসাধন যেন ওয়াটার প্রুফ হয়।