ডায়াবেটিস মূলত দুই ধরনের। একটি হলো টাইপ-১; অন্যটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস। এর বাইরেও দুই ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে। তবে এগুলো খুব কম দেখা যায়। এর একটি হলো, জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এবং অন্যটি আদার স্পেসিফিক বা অন্যান্য কোনো রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ডায়াবেটিস।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হরমোন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. লায়েক আহমেদ খান।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ টাইপ-২-তে আক্রান্ত। এজন্য আমরা টাইপ-২ ডায়াবেটিস মেলাইটাস নিয়ে বেশি চিন্তিত এবং এর ইন্টিগ্রেশনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি।

কারা বেশি ঝুঁকিতে

সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা দেয়ার আশংকা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং যাদের বংশে বা জেনেটিক্সে ডায়াবেটিস আছে, তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি। এর বাইরে যারা শরীর চর্চা করে না, সারা দিন বসে বসে থাকে, মোটা মানুষের এ ডায়াবেটিস হওয়ার আশংকা বেশি। আবার যারা ধূমপান করে বা দুশ্চিন্তা করে, তারাও ঝুঁকিতে রয়েছেন। গর্ভবতীদেরও এ ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার আশংকা থাকে।

প্রতিকারে করণীয়

প্রতিকারের জন্য দুটি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। ইতিমধ্যে যারা আক্রান্ত, তারা চিকিৎসার দিকে যাবে। আর যাদের এখনো ডায়াবেটিস ধরা পড়েনি কিন্তু ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেকে বলতে পারে, এটি তো ছোঁয়াচে বা সংক্রামক না, তাহলে প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব?

১. পরিবারে কারও ডায়াবেটিস আছে। নিজে মোটা হয়ে গেছেন, তেমন কাজকর্ম করা হয় না, তাহলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সুতরাং, আগে থেকে সচেতন হতে হবে, সঠিক ডায়েট, নিয়মিত শরীর চর্চা করলে, ধূমপান না করলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। হলেও অনেক পরে হবে। এভাবেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারব।

২. ইতিমধ্যে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের চিকিৎসা দিতে হবে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে নিই। একটি হলো, ওষুধ; অন্যটি লাইফস্টাইল, যাতে শরীর চর্চা, ডায়েটের বিষয়গুলো থাকে। প্রথমে ডায়েট এবং শরীর চর্চা, যাকে আমরা ইংরেজিতে মেডিকেল নিউট্রিশনাল থেরাপি বলি। প্রত্যেক ডায়াবেটিক রোগীর সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত। যে খাদ্যে শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট ও ভেজিটেবলস থাকবে।

এর বাইরে প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাটি করতে হবে। হালকা ব্যায়ামের মধ্যে জগিং, ট্রেডমিল বা ইন্সট্রুমেন্টাল কিছু হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। আমরা কঠিন ব্যায়ামের কথা কাউকেই বলি না। তবে সবচেয়ে ভালো হলো ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটাহাটি করা। এটি দিনের যেকোনো সময় করা যাবে। তবে সময় নির্দিষ্ট করে নিলে বেশি ভালো হবে। সকালে হাঁটলে প্রতিদিন একই সময়ে হাঁটা ভালো। ভোরে একেবারে খালি পেটে হাঁটা উচিত না। এতে সুগার লেভেল অনেক কমে যেতে পারে।

যেসব ওষুধে নজর দিতে হবে

ডায়াবেটিস রোগীদের প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা মুখের ওষুধ দিয়ে থাকি এবং অনেক ধরনের মুখের ওষুধ রয়েছে। এগুলো বিভিন্নভাবে কাজ করে। কিছু ওষুধ আছে শরীরের ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। আবার কিছু ওষুধ আছে যেগুলো শরীরের যে অংশ থেকে ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে যেমন, অগ্ন্যাশয়ের বিটা সেল, সেখানে চাপ সৃষ্টি করে ইনসুলিন বের করে আনার চেষ্টা করে। কিছু ওষুধ আছে যেগুলো শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে, সেগুলো প্রস্রাবের সঙ্গে বের করে দেয়।

এরপর দেই ইনসুলিন। অনেকে ইনসুলিনে ভয় পান, ভাবেন এটিই শেষ চিকিৎসা। তারা মনে করে, বডি ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্ট হয়ে যায় বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেলে বোধহয় মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় নেই। কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ভুল ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

ইনসুলিন আমরা যেকোনো সময় দিতে পারি। বড় কথা ইনসুলিন কখনো ফেইল করে না। বিশেষ করে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ইনসুলিনের বিকল্প নেই। শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা ব্যাহতের জন্যই কিন্তু ডায়াবেটিস হচ্ছে। স্থূলকায় হলে দেখা যায় ইনসুলিনের কার্যকারিতা অনেক কমে যায়। শরীরে যে ইনসুলিনটা কমে যাচ্ছে, সেটাই সাপ্লিমেন্ট করা হচ্ছে। এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।