মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির জামিন বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। জামিন শুনানিতে ‘ভালো কিছু প্রত্যাশা’ করছেন পরীমনির আইনজীবী মো.মজিবুর রহমান।

সোমবার (৩০ আগস্ট) তিনি বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য আইনে করা মামলায় আটক রয়েছেন পরীমনি। আমরা তার জামিন আবেদন করেছি। আদালত শুনানির জন্য মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দিন ধার্য করছেন। আমরা আশা করছি, এ দিন পরীমনি জামিন পাবেন। আমরা আদালতের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি।’

এর আগে গতকাল রোববার (২৯ আগস্ট) উচ্চ আদালতের নির্দেশে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পরীমনির জামিন শুনানির জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করেন। আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘গত ২২ আগস্ট পরীমনির আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। পরীমনির আইনজীবী বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে গেলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে আজ (রোববার) বিচারক পরীমনির জামিন শুনানির জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করেন।’

গত ২২ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে পরীমনির জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী মজিবুর রহমান। এরপর আদালত শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ২১ আগস্ট দুপুরে এ ঢালিউড অভিনেত্রীকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীমনিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

গত ১৯ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম পরীমনির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ১৩ আগস্ট ছয়দিনের রিমান্ড শেষে পরীমনি ও তার সহযোগী দীপুকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। ওইদিন মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীমনিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের দেখা করার আবেদনটি নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর পরীমনিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

আটকের একদিন পরই গত ৫ আগস্ট পরীমনি ও তার সহযোগীকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এরপর বনানী থানার মামলায় তাদের প্রথম দফায় চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ রিমান্ড শেষে ১০ আগস্ট পরীমনি ও তার সহযোগী দীপুর দ্বিতীয় দফায় দু’দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৪ আগস্ট সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করে র ্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র ্যাব)। অভিযানে ভয়াবহ মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয়। পরীমনির ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস এবং ডাইনিংরুম, বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।

ওইদিনই রাত ৮টা ১০ মিনিটে পরীমনিকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে র্যাব সদর-দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। পরদিন ৫ আগস্ট বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে পরীমনি, চলচ্চিত্র প্রযোজক রাজ ও তাদের দুই সহযোগীকে কালো একটি মাইক্রোবাসে করে বনানী থানার উদ্দেশে নিয়ে যায় র ্যাবের টিম।

এরপর র ্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও তার সহযোগী দীপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদকসেবন করতেন। এমনকি এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন তিনি। এজন্য বাসায় একটি ‘মিনিবার’ তৈরি করেন। বাসায় নিয়মিত ‘মদের পার্টি’ করতেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করতেন ও পার্টিতে অংশ নিতেন।

২০১৪ সালে রুপালি পর্দায় ক্যারিয়ার শুরু করা পরীমনি এ পর্যন্ত ৩০টি সিনেমা ও বেশ কয়েকটি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। পিরোজপুরের মেয়ে পরীমনিকে ঢাকাই চলচ্চিত্র জগতে নিয়ে আসেন প্রযোজক রাজ।