দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে ঢালিউড নায়িকা পরীমনির। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাসের আদালত এ আদেশ দেন।

আগের দফায় আদালতে হাজির করা হলে কাঠগড়ায় পুরোটা সময় পরীমনি ছিলেন নিশ্চুপ। মঙ্গলবার আদালতে আনার সময়, কাঠগড়ায় ও বের করার সময় নানামুখী আচরণ করেন নায়িকা।

এদিন দুপুর ১ টা ৫২ মিনিটে কড়া পুলিশি পাহারায় পরীমনিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরীমনিকে আদালতে হাজির করার পরে তার আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী তার সঙ্গে মামলার বিষয়ে কথা বলতে যান।

এ সময় সিআইডির নারী পুলিশ সদস্যরা পরীমনির সঙ্গে কথা বলা যাবে না জানিয়ে আইনজীবীদের জানান এবং পরীমনিকে ঘিরে রাখেন। এরপরে বিচারক আদালতে উঠলে পরীমনি মাথায় দুই হাত দিয়ে কাঠগড়ার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ।

এরপরে অন্য আসামিদের রিমান্ড শুনানি হলে পরীমনি কাঠগড়ায় একপাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় প্রচণ্ড গরম লাগলে তিনি তার হাত দিয়ে নিজের শরীরে বাতাস করেন এবং আদালতের এজলাসের ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তখন তাকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।

পরীমনি আইনজীবীরা দাবি করেন, পরীমনিকে এক কাপড়ে রাখা হয়েছে। এমন অভিযোগও উঠেছে যে, নায়িকার ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।

এদিন আদালতে কাঁদতেও দেখা গেছে ঢাকাই সিনেমার এই নায়িকাকে। পরে পরীমনিকে আদালত থেকে বের করার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে বলতে থাকেন, ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা, আপনারা তদন্ত করেন, আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। আপনারা সাংবাদিক কী করছেন। এরপর দ্রুত গতিতে পরীমনিকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চিত্রনায়িকা পরীমনিসহ সবাইকে আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখা হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আব্দুল্লাহ আবু আসামিদের রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন।

অপরদিকে আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করা হয়।

আসমিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, বিশ্বের ১০০ জন নায়িকার তালিকার মধ্যে পরীমনির নাম রয়েছে। সে সামথিং। ১২২ ঘণ্টা তিনি এক ড্রেসে রয়েছেন। তিনি তো একজন নায়িকা। তার তো একটা লাইফস্টাইল আছে। যখন আসামিপক্ষের আইনজীবী এ কথা বলছিলেন, ঠিক তখনই পরীমনি আদালতে ডকে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। বেশ কয়েকবার তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়।

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, পরীমনিকে এক ড্রেসে রাখা হয়নি। তিনি রিমান্ডে গিয়েও ড্রেস পরিবর্তন করেছেন। এখানে আসার সময় তিনি আবারও আগের ড্রেসটিই পরেছেন। এটাও তার একটা রাজনীতি।

পরীমনির আইনজীবীরা আরও বলেন, পরীমনি অসুস্থ এবং তিনি একজন মেয়ে মানুষ। তার বাসা থেকে কোনো মাদক উদ্ধার হয়নি। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন আবেদন নাকচ করে প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। এরপর পরীমনির আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, পরীমনির একমাত্র অভিভাবক তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আপনি (আদালত) অনুমতি দিলে তিনি দেখা করতে পারেন। তবে আদালত দেখা করার অনুমতি দেননি। এদিন পরীমনির বৃদ্ধ নানা শামসুল হক লাঠিভর দিয়ে আদালতে আসেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন।

এর আগে গত ৫ আগস্ট প্রথম দফায় ভিন্ন ভিন্ন মামলায় আসামিদের প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। গত ৪ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, পাঁচ বছর ধরে মাদকাসক্ত রহস্যময়ী চিত্রনায়িকা পরীমনি। তিনি ভয়ংকর মাদক এলএসডি এবং আইস সেবন করতেন। পরীমনির বাসায় মিনি বার ছিল। সেখানে প্রায়ই বসত ডিজে পার্টি-রঙ্গমঞ্চ। পরীমনির বাসায় মাদক সরবরাহ করতেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজ। তিনি রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার। এর আড়ালে তিনি অনৈতিক কাজ করে বিপুল অঙ্কের অর্থের মালিক হয়েছেন। রাজের মাধ্যমেই ২০১৪ সালে চিত্রজগতে আসেন পরীমনি। রাজের নেতৃত্বে একটা সিন্ডিকেট ছিল। যাদের কাজই হলো উঠতি বয়সি তরুণীদের দিয়ে নানা অপকর্ম করানো। সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত।

গত ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী মো. মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি স্থানের তথ্য দেয়। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েদা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানিক দল বনানী এলাকায় পরদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পরীমনি, নজরুল ইসলাম রাজ, আশরাফুল ইসলাম দীপু ও সবুজ আলীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।