বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন হাজারো মানুষ। সেপ্টেম্বর তথা আগামী এক মাসের মধ্যে দৈনিক মৃত্যু সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছবে।
শুধু তাই নয়, চলতি বছর তথা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই আরও অন্তত ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। মোট মৃত্যু দাঁড়াবে ৫৩ লাখে।
আর হাসপাতালে বা সরকারি তথ্যকেন্দ্রে নিবন্ধিত হয়নি-এমন মৃতদের হিসাবের মধ্যে ধরলে এই সংখ্যা বেড়ে হবে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ।
এমনটাই বলছে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের স্বাস্থ্য তথ্যবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন (আইএইচএমই)। খবর ব্লুমবার্গের।
আইএইচএমই’র প্রতিবেদনটি শুক্রবার প্রকাশিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে মৃত্যু পিক বা সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছবে। তারপর ধীরে ধীরে কমে আসবে। আইএইচএমই’র এই প্রতিবেদন অসুস্থতাজনিত কারণে যারা মারা গেছেন এবং তাদের বিষয়ে প্রতিবেদন করা হয়নি-এসব মিলে মোট যে পরিমাণ মৃত্যুর সংখ্যা তাকে ‘এক্সেক ফ্যাটালিটিজ’ বা অতিরিক্ত মৃত্যু হিসাবে বর্ণনা করেছে। এই সংখ্যার সঙ্গে সরকারিভাবে প্রকাশিত মৃত্যুর সংখ্যার বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে তারা।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে কমপক্ষে ৪৩ লাখ মানুষ মারা গিয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মহামারিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। কারণ বেশিরভাগ উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে করোনায় দৈনিক মৃত্যুবিষয়ক প্রকৃত সংখ্যা বা তথ্য হাসপাতাল কিংবা সরকারি সংস্থা পর্যন্ত আসতে পারে না। এই মুহূর্তে বড় উদ্বেগের কারণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
এর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগী ও এ রোগে মৃতের সংখ্যা। মূল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের যে সংখ্যা তার চেয়ে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা ১২০০ গুণ বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট জলবসন্তের মতো দ্রুত এবং সহজে ছড়িয়ে পড়ছে। ব্রিটেনের গবেষণা থেকেও দেখা গেছে করোনার টিকার বিরুদ্ধে অধিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১৩৫টি দেশে ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। ব্রিটেনে টিকা নিয়েও হাসপাতালে শত শত রোগী : ব্রিটেনে দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। এমনকি হাসপাতালেও ভর্তি করতে হচ্ছে এসব রোগীকে। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক প্রধান নির্বাহী সংস্থা পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই)।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট-১৪ দিনে ইংল্যান্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৪৬৭ জন। তাদের মধ্যে ৫১২ জন শতকরা হিসাবে যা ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ, করোনা টিকার দুই ডোজ আগেই সম্পন্ন করেছিলেন বলে জানা গেছে।
আক্রান্তদের সবাই করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টায় আক্রান্ত বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে পিএইচই। পাশাপাশি ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিরা টিকা না নেওয়াদের মতো সমানভাবে করোনা ছড়াতে পারেন বলে জনগণকে সতর্কও করেছে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিক গবেষণায় জানা গেছে, করোনা টিকার একটি ডোজও নেননি, এমন ব্যক্তিরা ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হলে তাদের দেহে যে পরিমাণ ভাইরাসের উপস্থিতি থাকে, টিকার ডোজ সম্পন্ন করা কোনো ব্যক্তি এ ধরনে আক্রান্ত হলে তার দেহেও একই পরিমাণ ভাইরাস থাকে।
এ ছাড়া টিকা নেননি এমন ব্যক্তিরা ডেল্টায় আক্রান্ত হলে যে মাত্রায় করোনা ছড়িয়ে দিতে পারেন, টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিরাও একই মাত্রায় এই রোগ ছড়াতে সক্ষম।’