বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও ঈদের আগে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়বে না। তবে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ঈদের পর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হবে বলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এই সমিতি। বিশ্ববাজারে দাম ওঠা-নামার ওপর নির্ভর করে এই দেশে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণ বড় দরপতনের মধ্যে পড়ায় গত মার্চে দেশের বাজারে দুই দফা স্বর্ণের দাম কমানো হয়। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর পর ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১০০ ডলারের উপরে বেড়ে গেছে। এ হিসাবে বাজুস চাইলে এখনই ভরিতে স্বর্ণের দাম পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিতে পারে।
সর্বশেষ গত ১০ মার্চ ভরিতে স্বর্ণের দাম ২০৪১ টাকা কমায় বাজুস। ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১০ মার্চ থেকে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৪১ টাকা কমিয়ে ৬৯ হাজার ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৫ হাজার ৯৬০ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৫৭ হাজার ২১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৪৬ হাজার ৮৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে দেশের বাজারে এ দামেই স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে। দেশের বাজারে যখন স্বর্ণের এই দাম নির্ধারণ করা হয়, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৭০০ ডলারের কাছাকাছি। ইতোমধ্যে তা বেড়ে প্রায় সাড়ে ১ হাজার ৮০০ ডলারের কাছাকাছি চলে এসেছে।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ স্বর্ণের দাম বাড়বে কিনা জানতে চাইলে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমরা সবসময় বিশ্ববাজারের সঙ্গে আপডেট থেকেছি। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। গত মার্চেই দেশের বাজারে দুই দফা স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দাম কমানোর পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে গেছে। তবে ক্রেতাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমরা ঈদের আগে স্বর্ণের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবশ্য এখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার মে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ঈদের পর স্বর্ণের দাম বাড়ানো হবে।’
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে। ফেব্রুয়ারির পতনের ধারা মার্চ মাসের শুরুতেও দেখা যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বজারে স্বর্ণের দাম কমে ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এই টানা পতনে স্বর্ণের দাম ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়।
বিশ্ববাজারে বড় পতন হওয়ায় ৩ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা এবং ১০ মার্চ ২ হাজার ৪১ টাকা কমায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। তার আগে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ভরিতে স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৮৩ টাকা কমানো হয়। সে হিসাবে চলতি বছরে তিন ধাপে দেশের বাজারে ভরিতে স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৫৪০ টাকা কমেছে।
স্বর্ণের দাম কমলেও রুপার পূর্বনির্ধারিত দাম বহাল রয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ১ হাজার ৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ৯৩৩ টাকা।
বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কমানোর পর মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে বেশ কয়েকবার দাম বাড়া-কমার ঘটনা ঘটে। তবে এই দাম বাড়া বা কমার প্রবণতা ছিল বেশ ছোট। প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৭৪৫ ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
তবে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা বেগবান হয়। আর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান হয়েছে। গেত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে শেষ কার্যদিবসে ১৫ দশমিক ৭৭ ডলার বা দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৮৩০ দশমিক ৯৫ ডলারে উঠে এসেছে।
স্বর্ণের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বেড়েছে রুপা ও প্লাটিনামের দাম। এর মাধ্যমে গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে রুপার দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স রুপার দাম দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪২ ডলার। আর মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে রুপার দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
আরেক দামি ধাতু প্লাটিনামের দাম গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৯ ডলারে। এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে প্লাটিনামের দাম বেড়েছে ১ দশমকি ৫৭ শতাংশ।