স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘দেশে বর্তমানে সাধারণ ও কোভিড রোগীদের জন্য ৭০ থেকে ৮০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিকের সময় সর্বোচ্চ অক্সিজেন চাহিদা ছিল ২১০ টন পর্যন্ত। এই মুহূর্তে দেশে দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টন। তবে, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে বর্তমানে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। যেকোনো সময় একই রকম অবস্থা যাতে আমাদের দেশে না হতে পারে সেজন্য সরকারিভাবে আপদকালীন সময়ের জন্য এই মুহূর্তে দেশে প্রায় ৯০০ টন অক্সিজেন মজুত রাখা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (৬ মে) দুপুরে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত ‘কোভিড-এর ২য় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি প্রস্তুতি ও জরুরি অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে আরও ৪৫০ টন অক্সিজেন মজুত রয়েছে। আগামী মাসে একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে। জুলাই মাসে অন্য একটি বেসরকারি সংস্থা আরও ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে। ফলে দেশে করোনাকালীন তৃতীয় ঢেউয়ের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে তা মোকাবিলা করতে কোনো সমস্যা হবে না। তবে করোনা আক্রান্তের মাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হলে এবং মানুষ অস্বাভাবিকভাবে আক্রান্ত হলে শুধু সেক্ষেত্রেই বড় রকম সমস্যা হতে পারে। সেরকম বিপর্যয় যাতে না হয় তার জন্যই সরকারকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লকডাউনসহ জরুরি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও করোনাকালীন ১৮টি জরুরি নির্দেশনাসহ বেশকিছু ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের মানুষ সরকারের জরুরি নির্দেশনাগুলেঅ মেনে চললে এবং আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে মানুষ বেপরোয়া চলাফেরা, কেনাকাটা, ভ্রমণ না করলে আশা করা যায় করোনার তৃতীয় ঢেউ দেশে এলেও বাংলাদেশ তা ভালোভাবেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।’
বর্তমানে দেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় রোগীর খারাপ অবস্থা হলে তখন অক্সিজেন মূল ভূমিকা পালন করে। এ কারণে অতি দ্রুত দেশের সরকারি ১৩০টি হাসপাতালে এখন সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই ১৩০টি হাসপাতালের মাধ্যমে এখন প্রায় ১৬ হাজার শয্যায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০০টি আইসিইউ বেডে মানুষ এখন কোভিড চিকিৎসা নিচ্ছে। খুব শিগগিরই সেখানে আরও ১০০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগ দেশে কোভিড চিকিৎসায় বিরাট অবদান রাখবে।’
টিকা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আমাদের তিন কোটি ডোজ টিকার চুক্তি থাকলেও সে দেশের বর্তমান ভয়াবহ অবস্থার কারণে চুক্তি অনুযায়ী সব টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, টিকা নিতে রাশিয়ার সঙ্গে সরকারের কথা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি হবে আমাদের। পাশাপাশি, চীন ১২ মের মধ্যে পাঁচ লাখ টিকা দিচ্ছে। চীন সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। দ্রুতই চীনের টিকা নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত চলে আসবে। একই সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্য যে দেশগুলো উৎপাদন করছে আমরা সেসব দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ করছি। সবমিলিয়ে আশা করা যায়, খুব দ্রুতই টিকার সঙ্কট কেটে যাবে।’
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বেশি মানুষকে টিকা দিতে হবে। সরকার যাতে দ্রুতই টিকা আমদানি করতে সক্ষম হয় সেজন্য সরকারের সকল বিভাগ সক্রিয় রয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খান বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে যখনই সরকার ডেকেছে তখন দেশের প্রাইভেট মেডিকেল এগিয়ে এসেছে। আগামীতেও যখনই সরকার ডাকবে প্রাইভেট মেডিকেলগুলো সেভাবেই সরকারের পাশে দাঁড়াবে। করোনাকালীন এই দুর্যোগেও সরকারের অনুরোধে প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।’
মুবিন খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আনোয়ার হোসেন খান এমপি, স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিপু মিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য হাসপাতাল প্রতিনিধিবৃন্দ।