হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্মভীরু মুসলমানদের উসকে দিতেন। যার প্রেক্ষিতে এর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রবিরোধী ঘটনা, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

সোমবার (২৬ এপ্রিল) মোহাম্মদপুর থানার চুরি ও ভাঙচুরের মামলায় তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাজেদুল হক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাজেদুল হক উল্লেখ করেন, আসামি মামুনুল হক মামলার ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তদন্তে জানা যায়, আসামি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্মভীরু মুসলমানদের উসকে দিতেন। যার প্রেক্ষিতে এর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রবিরোধী ঘটনা, জ্বলাও-পোড়াও, ভাংচুর ও হত্যাজনিত ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আসামি মামুনুল হক জামিনে মুক্তি পাইলে পুনরায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও জ্বালাও-পোড়াওসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামি মামুনুলকে জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।

এর আগে ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় ১৯ এপ্রিল তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাজেদুল হক। শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সেদিন তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

১৮ এপ্রিল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ।

হেফাজতের তাণ্ডবের মামলায় আবারও সাতদিনের রিমান্ডে মামুনুল

হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় করা মামলায় মামুনুল হকের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২৬ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন মোহাম্মদপুর থানার নাশকতার মামলায় সাতদিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় মতিঝিল থানার মামলা ও চলতি বছরের মার্চে বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিন করে মোট বিশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।

শুনানি শেষে পল্টন থানার মামলায় চারদিন ও মতিঝিল থানার মামলায় তিনদিন করে মোট সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ করে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এ সময় রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও আরামবাগসহ আশপাশের এলাকায় যানবাহন ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হেফাজতের কর্মীরা। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। এছাড়া চলতি বছরের মার্চ মাসে বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় পল্টন থানায় আরেকটি মামলা করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে বায়তুল মোকাররমে গিয়েছিলাম : মামুনুল

পল্টন থানায় হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় রিমান্ড শুনানি চলাকালে বিচারক মামুনুল হককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার কিছু বলার আছে?’

তখন মামুনুল হক বলেন, ‘বায়তুল মোকাররমের ঘটনার দিন আমি বাংলাবাজার মসজিদে ইমামতি করছিলাম। নামাজের পর আমি মসজিদে বসে ছিলাম। সে সময় পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদায় একজন আমাকে ফোন করে বলেন, মামুনুল হক সাহেব আমরা তো বিপদে আছি। বায়তুল মোকাররমে আপনাদের কর্মীদের সঙ্গে আমাদের পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। মসজিদের ভেতরে আপনাদের অনেকে আটকা আছে। আপনি যদি সেখানে যেতেন তাহলে ভালো হতো। আমি তার অনুরোধে বায়তুল মোকাররমে যাই।’

হেফাজতের তাণ্ডবের আরেক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মামুনুলকে

২০১৩ সালে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় পল্টন থানায় করা দুই মামলায় মামুনুল হককে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন পুলিশ। ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী এক মামলায় তার গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। আরেক মামলায় ১১ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের পর মামুনুলের আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন। বিচারক শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।