করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফনে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের নওগাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে। উপজেলার মাটিয়ামালিপাড়া গ্রামে অমানবিক এ ঘটনা ঘটে।

পরে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় জানাজা ও দাফন হলেও এতে প্রতিবেশী ও গ্রামের মানুষদের লকডাউনের ভয় দেখিয়ে এতে অংশ নিতে দেননি মোফাজ্জল হোসেন।

জানা গেছে, মাটিয়ামালিপাড়ার মুকুল আহম্মেদ (৫০) গত মাসের শেষের দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৫ এপ্রিল তাকে রাজধানীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়।

৬ দিন আইসিইউতে চিকিৎসা শেষে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৯ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময় তার করোনা নেগেটিভ আসে। তবে করোনাপরবর্তী জটিলতায় আবারও শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ফের তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় শুক্রবার বিকাল ৪টায় তিনি মারা যান।

পরে প্রথমে লাশ তার কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পরিবারের সিদ্ধান্ত ও মরহুমের ইচ্ছানুযায়ী লাশ তার গ্রামের বাড়ি মাটিয়ামালিপাড়া নিয়ে সেখানে মা-বাবা ও ভাই-বোনদের কবরের পাশে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু স্থানীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন লাশ গ্রামের কবরস্থানে কবর দেয়া ও দাফনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণ গ্রামবাসীকে উস্কে দিয়ে তিনি মসজিদে তালা লাগিয়ে রাখেন যেন খাটিয়াসহ অন্যান্য জিনিস ব্যবহার করতে না পারে। এমনকি লাশ গ্রামে নিতে দেয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেন।

এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়েন। পরে নিরুপায় হয়ে এ বিষয়ে তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতা কামনা করেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে জানাজা ও দাফনের অনুমতি দিলেও মোফাজ্জল গ্রামের মানুষদের জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে নিষেধ করে দেন। কেউ জানানায় অংশ নিলে তাকে ও তার পরিবারকে লকডাউন দিয়ে দেয়া হবে বলেও হুশিয়ার করেন।

এ বিষয়ে মুকুল আহম্মেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রশাসনের সহযোগিতায় লাশ কোনোরকমে দাফন করতে পারলেও আমাদের কাউকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। গ্রাম ও প্রতিবেশী কাউকে জানাজায়ও অংশ নিতে দেয়া হয়নি। এমনকি যারা কবর খুঁড়েছেন তাদেরও ভয় দেখিয়ে জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে বাধা দেয়া হয়েছে। তাই ফজরের নামাজের পর জানাজা ও দাফনের সিদ্ধান্ত থাকলেও অল্প কয়েকজন মিলে তাড়াহুড়ো করে তার আগেই আমরা দাফন করি। গ্রামে ঢুকতে না পেরে যে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম সেটা নিয়েই আবার ঢাকায় ফিরে এসেছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোফাজ্জল হোসেন বলেন, মুকুল আহম্মেদের লাশ এলাকায় আনার খবর পেয়ে স্থানীয় এমপি ও ইউএনও সাহেবের সঙ্গে লাশ জানাজা ও দাফনের বিষয়ে মতামত নিয়েছি। উনারা নিষেধ না করায় লাশ দাফনে কোনো বাধা দেয়া হয়নি। বাধা দেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।