বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা এখন কথায় কথায় হেফাজতে ইসলামকে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছেন। হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত তো আপনারা (আওয়ামী লীগ)। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বসে তাদের (হেফাজত) সঙ্গে মিটিং করে চুক্তি করেন। কওমী জননী উপাধি নেন। অথচ বিএনপির সঙ্গে এখন হেফাজতকে জড়ান। বিষয়টি হাস্যকর।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ‘করানো মোকাবিলায় স্থানীয় সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক ওই ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। ২৬ মার্চের পর থেকে গত কয়েকদিনে বোধহয় কয়েক হাজার গ্রেফতার করে ফেলেছে। শুনলে অবাক হবেন- চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও ঢাকায় আমাদের দলের (বিএনপি) কর্মীরা রাতে বাসায় থাকতে পারছে না। ব্লক রেইড করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই তারা বলছেন এরা হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি নয়, সরকারই সম্পৃক্ত মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো প্রায়ই সরাসরি বলে ফেলেন, তাদের (হেফাজতের) এতো কোটি টাকা দিয়েছি, আমরাই একমাত্র তাদের জন্য কাজ করছি। কাজ যেহেতু করেছেন, দায়িত্বও আপনাদেরই নিতে হবে।’
সুবর্ণজয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে কয়েকটি বাম সংগঠন এবং হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে কোনো সংগঠন, যেকোনো রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ করবে, এটা তো তাদের অধিকার। এটা সংবিধান সম্মত অধিকার। আপনি গণতন্ত্রের কথা বলবেন, অথচ কাউকে প্রতিবাদ করতে দেবেন না। আপনি কাউকে কথা বলতে দেবেন না, অন্যায়গুলোকে তুলে ধরতে দেবেন না, ভুলগুলোকে চিহ্নিত করতে দেবেন না। তাহলে কীভাবে একটা সরকার চলতে পারে। যেটা তো আর যাই হোক গণতান্ত্রিক সরকার হতে পারে না।’
করোনা মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘করোনায় এখন আমাদের আল্লাহর ভরসা করা ছাড়া কোনো কিছুই করার নেই। ভ্যাকসিন প্রথম বার যারা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয়বার পাবেন কি-না তা কেউ জানে না। শুনতে পাচ্ছি, ভারত রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। একজন কিছুদিন আগে বলেছেন- একটিমাত্র দেশের ওপরে নির্ভর করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা, এটাও তো একটা ক্রিমিনাল ওফেন্স। আপনাকে একটা সরকার চালাতে হলে অনেক পথ খোলা রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার চীনকে বলে দিল যে, না তোমাদের এটা আমাদের দরকার নেই। ফেরত দিয়ে দেয়া হলো। আপনারা ভারত থেকে নেয়া শুরু করলেন। তাও আবার অনেক বেশি দামে। সেটাও ব্যক্তি মালিকানায় একজন ব্যবসায়ীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য তার কাছ থেকে এই ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। এটা গর্ভামেন্ট টু গর্ভামেন্ট নেয়া যেত। অন্যান্য দেশগুলো তো সেভাবেই নিচ্ছে।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘করোনা সমস্যা মোকাবিলা জনগণকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে এটা করার কোনো উদ্যোগ সরকারের নেই। বিদেশিদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি, অথচ দেশের ভেতরে আমরা জাতীয় ঐক্য করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। জনগণের অংশীদারিত্ব ছাড়া এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব না। সরকারকে বলব, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করুন।’
ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবান উপস্থাপন করেন জেএসডির কার্য্করী সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। ফারাহ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজমুদার, জেএসডির কার্যকরী সভাপতি মো. সিরাজ মিয়া, আ ক ম আনিসুর রহমান খান কামাল, সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন তালুকদার, সহ-সভাপতি তৌহিদুল হোসেন প্রমূখ বক্তৃতা করেন।