নতুন করে সরকারঘোষিত আটদিনের বিধি-নিষেধের প্রথমদিনে রাজধানীর সর্বত্র কঠোরভাবেই ‘লকডাউন’ পালিত হচ্ছে। এই বিধি-নিষেধ সর্বাত্মকভাবে পালনে বাধ্য করতে রাজধানীর পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে রাজপথের প্রধান সড়ক ও মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গেল সপ্তাহের লকডাউনের সঙ্গে আজ বুধবারের (১৪ এপ্রিল) লকডাউনের কোনো মিলই নেই। গত নয়দিন লকডাউনে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ দেখা গেলেও আজ মানুষ নেই বললেই চলে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলেই পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।
রাস্তায় পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন যানবাহন চোখে পড়েনি। প্রায় প্রতিটি যানবাহনকে থামিয়ে থামিয়ে কী প্রয়োজনে কোথায় যাচ্ছেন তা জানতে চাইছেন পুলিশ সদস্যরা। অপ্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন নিশ্চিত হলে মামলা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।
সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও দায়িত্বশীল শীর্ষ কর্মকর্তারা এবার আগে থেকেই সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দেয়ার ফলে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নগরের বাসিন্দারা যেন হাওয়ার মতো উবে গেছেন!
আজ সরেজমিনে রাজধানীর ধানমন্ডি, লালবাগ, তেজগাঁও, রমনা, কলাবাগানসহ বিভিন্ন থানা এলাকা ঘুরে অধিকাংশ রাস্তাঘাটে পুলিশের টহল ভ্যান ও সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা গেছে। গতকালের (১৩ এপ্রিল) তুলনায় রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তাছাড়া রমজানের প্রথম দিন হওয়ার কারণে এমনিতেই মানুষ ঘরের বাইরে বের হননি।
রাজধানীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যারিকেড দিয়ে টহল বসিয়ে যানবাহন ও যাত্রীদের জেরা করতে দেখা গেছে। তবে যারা ঘরের বাইরে বের হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন বলে প্রমাণ দেখিয়ে যেতে পারছেন।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় কর্তব্যরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তারা সাহরির পর থেকেই রাস্তায় টহলে নেমেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কড়া নির্দেশ করোনার সংক্রমণরোধে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় থাকতে দেয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, পুলিশের বিশেষ পাস ছাড়া চলাচলে বাধা দিতে বলা হয়েছে। তবে মানবিক বিবেচনায় কিছু মানুষ যারা তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে জানেন না কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন তাদেরকে চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে।
লকডাউন চলাকালে ফলমূল ও কাঁচামাল পরিবহনের অনুমতি থাকলেও বেশ কিছু রাস্তায় পুলিশকে ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি ফিরিয়ে দিতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পুলিশের বাধার কারণে তাদের অনেকটা পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
নীলক্ষেত মোড়ে সরকারি এক কর্মকর্তা অসুস্থ ছেলেকে পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রিকশার খোঁজ করছিলেন। কিন্তু দু-চারটা রিকশা থাকলেও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ও কলাবাগানে তারা যেতে চাইছিলেন না। একজন রিকশাচালক রাজি হলেও ভাড়া চাইলেন ১০০ টাকা। এ সময় সরকারি ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘৪০ টাকার ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি হাঁকছো কেন?’