বর্তমানে দেশে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। তাইতো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশে লকডাউন দিয়েছে সরকার। এসময় সংক্রমণ রোধে আমাদের অনেক বেশি সচেতন থাকা জরুরি। সেই সঙ্গে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।

তাইতো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম খুবই জরুরি। করোনা সংক্রমণ রোধেও যা সবচেয়ে ফলপ্রসূ। এছাড়া নতুন স্বাভাবিক অবস্থায়ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা সুস্থতার জন্যে আবশ্যক। অন্যথায় আরো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

এসময় শরীর আর মনের সমন্বয়ে বেড়ে ওঠা নিজেকে ঠিক রাখতে আপনি আশ্রয় নিতে পারেন যোগব্যায়ামের। যাকে ইয়োগা চর্চা হিসেবেও বলা হয়ে থাকে। শুরুতে একটু কষ্টকর এবং পরিশ্রমী মনে হলেও কিছু দিনের নিয়মিত অনুশীলনে এ ব্যায়াম বেশ মানিয়ে যাবে। ৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা চর্চা করা শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা চর্চা মন ও শরীরের সঙ্গে সংযোগ এবং উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে। যোগ ব্যায়ামের সুবিধা হলো, এটি মনের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে সাহায্য করে।

তাই এই সময় নিয়মিত ইয়োগাগুলো চর্চা করতে পারেন। এই যোগব্যায়াম বা ইয়োগাগুলো চর্চার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে ‘গোমুখাসন’ একটি। আজ আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করবো।

গোমুখাসন

প্রথমে মেরুদণ্ড সোজা করে দুই পা সামনের দিকে ছড়িয়ে বসুন। এবার বাম পায়ের হাঁটু ভেঙে ডান পায়ের নিচ দিয়ে নিয়ে এসে ডান নিতম্বের কাছে নিয়ে রাখুন। বাম পায়ের গোড়ালি ডান নিতম্বের সঙ্গে লেগে থাকবে। তবে যদি না লাগাতে পারেন জোর করে লাগাতে যাবেন না। আস্তে আস্তে অভ্যাস হলে লেগে যাবে। এবার ডান পা হাঁটু ভেঙে বাম ঊরুর ওপর দিয়ে এনে এমনভাবে রাখুন, যাতে বাম নিতম্বের সঙ্গে ডান পায়ের গোড়ালি স্পর্শ করে। পায়ের পাতার পিঠ মাটিতে বিছানো থাকবে।

এবার ডান হাত ডান কাঁধের ওপর নিয়ে এসে যতদূর পারেন পিঠের ওপর রাখুন। হাতের পাতা উপুড় অবস্থায় পিঠের ওপর থাকবে। এবার বাম হাত কোমরের কাছ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসে পিঠের ওপর রাখা ডান হাতটি ধরতে চেষ্টা করুন। ডান হাত দিয়ে বাম হাত আটকে ধরুন। এ আসনে যেদিকের পা ওপরে থাকবে সেদিকের হাত কাঁধের ওপরে থাকবে, হাত কানের সঙ্গে লেগে থাকবে। অর্থাৎ বাম পা ওপরে থাকলে বাম হাত কাঁধের ওপর থাকবে। ডান পা ওপরে থাকলে ডান হাত কাঁধের ওপর থাকবে। মেরুদণ্ড ও শরীর সবসময় সোজা থাকবে। সামনে বা পেছনে, ডানে বা বামে যেন বেঁকে না যায়। দম স্বাভাবিক রেখে ডান পা ওপরে রাখা অবস্থায় ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড অবস্থান করুন। আবার বাম পা ওপরে রাখা অবস্থায় ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড অবস্থান করুন। এভাবে ডানে-বামে মিলে এক প্রস্থ হবে।

উপকারিতা

>> এ আসনে মানসিক ও স্নায়বিক উত্তেজনা দূর হয়।

>> – হাত ও কাঁধের সন্ধিস্থলের জন্যে বিশেষ উপকারী।

>> নিয়মিত এ আসন করলে অর্শ, বাত, সায়াটিকা, মূত্রদাহ হতে পারে না।

>> ব্যাকপেইন, আর্থ্রাইটিস এবং হৃদরোগের জন্যেও এ আসনটি উপকারী।

>> নিয়মিত এ আসনটি অভ্যাস করলে হাঁটুতে বাতব্যথা ও বাতজনিত রোগ হতে পারে না।

>> এ আসন নিয়মিত অনুশীলন করলে কোনো স্ত্রীরোগ হতে পারে না এবং যৌন সংযম বজায় রাখা সহজ হয়।

>> যাদের ফ্রোজেন শোলডার রোগ রয়েছে অর্থাৎ হাত ওপরে তুলতে পারেন না তাদের জন্যে এ আসন বিশেষ উপকারী।

>> যাদের ভালো ঘুম হয় না তারা রাতে খাবারের পরে বজ্রাসন করে ঘুমানোর আগে এ আসন নিয়মিত করলে অনিদ্রা দূর হয়।

– যারা অনেকক্ষণ কাজ করতে করতে কাঁধের কাছে ব্যথা অনুভব করেন, চিনচিন ব্যথা করে-মনে হয় একটি শলাকা বা সুঁই ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে-তারা নিয়মিত এ আসন করলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।

সতর্কতা

যেকোনো ইয়োগা চর্চার আগে অভিজ্ঞ ডাক্তার বা ইয়োগা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।