করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন শুরু হয়েছে। এ সময় এটিএম বুথ, এজেন্ট ব্যাংকিং, ইন্টারনেট, অ্যাপ ও ইউএসএসডিভিত্তিক সব লেনদেন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

একই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি পরিপালনের নির্দেশের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি) লেনদেনে সীমা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সেবায় প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত সেন্ডমানিতে গ্রাহককে অতিরিক্ত কোনো চার্জ দিতে হবে না। তবে সেন্ডমানি ছাড়া ক্যাশ আউটসহ অন্য সেবায় চার্জ থাকছে আগের মতোই।

রোববার (৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি করে। এরপর থেকেই মোবাইল ফাইন্যান্সিং কোম্পানিগুলো এটি কার্যকর করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে- এমএফএসের ব্যক্তি হতে ব্যক্তি (পি-টু-পি) লেনদেনের সর্বোচ্চ মাসিক সীমা ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ করা হয়েছে। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (পি-টু-পি) লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সব পদ্ধতি সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে মাসিক ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জবিহীন লেনদেন করা যাবে।

চার্জবিহীন ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (পি-টু-পি) একক লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা লকডাউন চলাকালে এ সুবিধা পাবেন।

অন্যদিকে সাধারণ গ্রাহকরা বলছেন, লকডাউনের সময় সেন্ডমানি ফ্রি করা ভালো উদ্যোগ, এটা অন্য সময়ও থাকা উচিত। শুধু সেন্ডমানিতে নয়, ক্যাশ আউটকেও চার্জমুক্ত রাখা যেতে পারে লকডাউনে। মোবাইল ফাইন্যান্স কোম্পানি বলছে, সরকারের নির্দেশনা এলে সেটা সবাই মানতে বাধ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরই আমরা বিনা চার্জে সেন্ডমানির ব্যবস্থা করেছি।

একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাসমিনা তাবাসছুম নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘আমি প্রতি মাসে গ্রামে পরিবারসহ পরিচিতদের মাঝে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠাই। তাদের সেন্ডমানি করতে পাঁচ টাকা কেটে নেয় কোম্পানি। লকডাউন সময়ে ফ্রি করাটা ভালো উদ্যোগ। সেন্ডমানিতে চার্জ অন্য সময়ও মওকুফ করা যেতে পারে। তবে লকডাউনের সময়ে ক্যাশ আউট চার্জ ফ্রি করা যেতে পারে। এ সময় মানুষের আয় থাকছে না।’

বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, সেন্ডমানিতে এর আগে গ্রাহককে ৫টি প্রিয় নম্বরে চার্জমুক্ত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন লিমিট বাড়িয়ে ৪০ হাজার করে শুধু লকডাউনের এ সময়টাতে। এক মাসে এ পরিমাণ লেনদেন করতে পারলেও দিনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা সেন্ডমানি করতে পারবেন। তবে সেন্ডমানি ছাড়া অন্য চার্জ আগের মতোই থাকছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ব্যাংক ও সকল ধরনের আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আইসিটি-সহ স্ব স্ব ‘ক্রিটিকার সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট’-এর ক্ষেত্রে ‘কি পারসন’ চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সেবা চালু রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবসায় ধারাবাহিকতা পরিকল্পনা (বিসিপি) প্রণয়ন করবে।’

‘গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের জন্য ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার, এটিএম, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট পয়েন্ট এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) এজেন্ট পয়েন্টে নগদ অর্থ ও ই-মানি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সরবরাহের সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে নিশ্চিত করবে। লেনদেনের স্থান অর্থাৎ ব্যাংক, এটিএম, পোজ ও এজেন্ট পয়েন্টে নিয়মিতভাবে জীবাণুমুক্ত ও তদস্থলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ব্যাংক ও সকল ধরনের আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পরিশোধ সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করবে।’

‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ বিক্রয়কারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণের স্ব স্ব ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব, এমএফএস হিসাব, এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব ও পিএসপি হিসাবকে ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা যাবে।’

ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধে ছাড় :

ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের তারিখ সরকার ঘোষিত সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপকালীন সময়সীমার মধ্যে নির্ধারিত থাকলে ওই বিল পরিশোধের তারিখ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হওয়ার পর ৫ কর্মদিবস পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ বা বর্ধিত করতে বলা হয়েছে। পরিশোধের সময়সীমা পর্যন্ত লেট পেমেন্ট ফি আরোপ না করতেও নির্দেশনায় বলা হয়েছে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপকালীনের মধ্যে শুধুমাত্র প্রিন্সিপাল এমাউন্টের উপর সুদ আরোপ করা যাবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী মাসের বিলে, পূর্ববর্তী মাসের বিলের সুদের উপর কোনো প্রকার নতুন সুদ আরোপ করা যাবে না। এনএফসি সুবিধাযুক্ত কার্ডের লেনদেন সীমা তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হয়েছে।

ক্লিয়ারিং হাউসের লেনদেন :

জরুরি আন্তব্যাংক লেনদেন সম্পন্নের সুবিধার্থে সরকার ঘোষিত সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে নিষেধাজ্ঞার সময় বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (বিএসিএইচ) বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘরের কার্যক্রমও সীমিত পরিসরে চালু থাকবে।

লকডাউনে ৫ লাখ টাকার বেশি অংকের চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য সকাল ১১টার মধ্যে পাঠাতে হবে। এসব চেক বেলা ১২টার মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। আর যেকোনো রেগুলার চেক সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে ক্লিয়ারিং হাউজে পাঠাতে হবে। এসব চেক নিষ্পত্তি হবে বেলা ১টার মধ্যে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এই সময়ে চেক ক্লিয়ারিং করবে বিএসিএইচ।

সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপকালীন রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে লেনদেন হবে ১০টা হতে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।

সার্বক্ষণিকভাবে এটিএম, পোজ, ইন্টারনেট, অ্যাপ ও ইউএসএসডি ভিত্তিক লেনদেন সেবা চালু রাখতে হবে। এ জন্য সকল ব্যাংক, এমএফএস, পিএসপি এবং পিএসও সমূহ স্ব স্ব সিস্টেম অবকাঠামোর উপর সতর্ক নজরদারী রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী সকল অবকাঠামো যথারীতি চালু রাখতে হবে এবং এ সংক্রান্ত নিরাপত্তা ও সাইবার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকবে।

ব্যাংক ও পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অভিযোগ গ্রহণ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য ২৪/৭ হটলাইন ও ইন্টারনেট ভিত্তিক গ্রাহক সেবা চালু রাখতে বলা হয়েছে।