রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পৌর এলাকায় পুকুরের মাছ চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বার্তা বাজারসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হইলে ১ ঘণ্টার মাথায় অভিযুক্ত পুকুর মালিক ও সাবেক সেনা সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে।

এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার কিশোরের পিতা মোঃ ছহির উদ্দিন বাদী হয়ে গতকাল রাত নয়টার দিকে কথিত পুকুর মালিক অভিযুক্ত জহিরুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

গতকাল শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুর দুইটার দিকে চারঘাট পৌর এলাকার মেরামতপুর মৌজার সিদ্দিক কলেজ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতিত শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে শিশু তুষার বন্ধুদের সাথে গোসলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হবার পরে প্রত্যেকদিন যে পুকুরে গোসল করে সে পুকুরে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে পার্শ্ববর্তী পুকুরে গোসল করতে গেলে পুকুর মালিক মাছ চুরি সন্দেহে শিশু তুষারসহ অপর একটি বন্ধুকে আটকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চড়-থাপ্পড় দেয়।

এ সময় পুকুর মালিক জহিরুলের হাত থেকে অপর বন্ধু পালিয়ে গেলেও আটকে থাকে তুষার। বন্ধু পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে তাকে গাছের সাথে বেঁধে পার্শ্ববর্তী আম গাছের ডাল ভেঙে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও মারধর করে পুকুর মালিক জহিরুল।

ঘণ্টা খানেক বেঁধে রাখার পর ঘটনাটি দেখে স্থানীয় লোকজন কথিত পুকুর মালিকের কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে । পরবর্তীতে জহিরুল ইসলাম ওই কিশোরকে গাছে বেঁধে রাখার দৃশ্য ফেসবুকে শেয়ার করেন। যা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে।

তবে গতকাল শুক্রবার (২ এপ্রিল) অভিযুক্ত পুকুর মালিক জহিরুল ইসলাম (৫০) এর সাথে কথা বললে (গ্রেপ্তারের আগে) দাবি করেন তিনি যেটা করেছেন সেটা ঠিক এবং শিশুটির অপরাধের এটাই মুখ্য শাস্তি। মাছ চুরির বিষয়ে তিনি বলেন দীর্ঘদিন যাবৎ কয়েকটি ছেলে আমার পুকুরে মাছ চুরি করে আসছিল, আমি অতীতও বিষয়টি ধরার চেষ্টা করি কিন্তু ধরতে পারিনি। আজ হাতেনাতে ধরতে পারি এবং তাৎক্ষণিক তাদের বিচার করেছি।

কিশোর তুষারের বাবা মোঃছহির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কথিত মাছ চাষী জহিরুল আমার ছেলেকে চুরির অপবাদ দিয়ে এক ঘণ্টার মতো বেঁধে রেখে তাঁকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন । এ বিষয়ে রাত্রিতে থানায় মামলা করলে ওসি স্যারের নেতৃত্বে এক ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আশা করছি কঠোর শাস্তির মাধ্যমে চারঘাট মডেল থানা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সেই সাথে ধন্যবাদ জানান ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্যকে।

চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, গতকাল শুক্রবার (২ এপ্রিল) রাত্রি নয়টার পরে আমাদের কাছে কিশোর তুষারকে নির্যাতনের অভিযোগে তাঁর পিতা ছহির উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করলে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামলা দায়েরের ১ ঘণ্টার মাথায় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিশু নির্যাতন আইন ও মারধরের দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়াই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। এবং আজ শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরের দিকে আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, শিশুটি বর্তমানে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান শিশুটির অবস্থা এখন কিছুটা ভালো, বেশ কিছু জায়গায় মারাত্মক ভাবে জখম রয়েছে। চলাফেরা করতে সমস্যা হইলেও কয়েকদিন বিশ্রামে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।