চলতি মৌসুমের বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। সিলেটের দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা গ্রামের কৃষক আবদুল হেকিমের চাষ করা হাইব্রিড বোরো ধান কেটে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

jagonews24

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) তিনি সচিবালয় থেকে ভার্চুয়ালি বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন। ২ কোটি ৫ লাখ চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আস্তমা গ্রামে এ বছরের বোরো মৌসুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমরা তিনটি মৌসুমে ধান পাই। বোরোটাই আমাদের চালের সবচেয়ে বড় মৌসুম।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত এপ্রিলের ১৫ তারিখের পর বোরো কাটা শুরু হয় কিন্তু হাইব্রিড করার কারণে আগেই কাটা হচ্ছে। আমাদের একজন চাষী ১০ একর জমিতে হাইব্রিড বোরো চাষ করেছেন, তিনি স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। খুবই একজন উদ্যোগী চাষী, তার সৃজনশীলতা আছে। হাওর এলাকার ধানটা যদি আমরা ঘরে তুলতে পারি, আমাদের আর ঝুঁকি থাকবে না। স্বস্তিতে থাকতে পারব। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হিসেবে সুনামগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন জানাই, ধন্যবাদ জানাই। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর করেছি। উনিও আপনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।’

এ বছর ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে সারাদেশে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। লক্ষমাত্রার চেয়ে ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেশি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম হাইব্রিড ধানে উৎপাদনশীলতা বেশি তাই আমরা চেয়েছিলাম ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড আবাদ করব। সেজন্য আমরা কৃষকদের বীজসহ অন্যান্য প্রণোদনা দিয়েছি। এবার আমরা বোরোতে অতিরিক্ত ৭৩ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছি। আমরা আশা করি হাইব্রিডের কারণে কমপক্ষে ৩ লাখ টন বেশি ধান আমরা পাব।’

তিনি বলেন, ‘কৃষক গত বোরো, আউশ ও আমনে ভাল দাম পেয়েছে ইনশাআল্লাহ তারা এই বোরোতেও যাতে ভাল দাম পায় সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেভাবে আমরা ধান ক্রয়েরও ব্যবস্থা করব।’

বন্যার কারণে গত আমন ও আউশের ফলনের ক্ষতি হয়েছিল জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা দেখেছি অগ্রহায়ন মাসেও চালের দাম বেড়ে গিয়েছিল, এখন পর্যন্ত যদিও চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, তবু দামটা বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষের কিছুটা হলেও কষ্ট হয়েছে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বেড়েছে জানিয়ে কৃষি মন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের খাদ্যের যাতে কোনো অভাব না হয় আমরা সেটি নিশ্চিত করতে চাই।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে বিশেষ আনন্দের দিন আমাদের জন্য। আমরা প্রতীক্ষা করছিলাম ধান কবে উঠবে, এটার সঙ্গত কারণও ছিল। বার বার বন্যা হওয়ায় গত আমন মৌসুমে উৎপাদন কম হওয়ায় দেশে ধান ও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকার কারণে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি আমাও উদ্বিগ্ন ছিলাম বোরোটা কী রকম হয়?’

তিনি বলেন, ‘বোরো কর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা জাতির কাছে বার্তা দিতে পারছি আগামভাবে বোরোটা আসছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘বোরোতে হাইব্রিড জাতটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। এবার আমরা প্রণোদনার মাধ্যমে বোরোতে ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড বীজ দিতে পেরেছি, ফলশ্রুতিতে হাইব্রিডের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত জমি কমছে, সেখানে যদি আমরা হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধি করতে পারি তাহলে দেখা যাবে অল্প জমিতে আমরা অনেক বেশি ফলন পাব। সেই প্রেক্ষিতেই এই আইব্রিড আবাদ। আমি শুনে আনন্দিত যে এই জাতটি ১৩৬ দিনে কর্তন হতে যাচ্ছে।’

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘ধান কর্তনের কারণে একটি বার্তা দেশবাসী পেয়ে গেল যে, শুরু হলো বোরো ধান কর্তন, আর আমাদের সমস্যা নেই। এবার আমরা ২ কোটি ৫ লাখ টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছি। এবারই সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা। গত বছর উৎপাদন ছিল ২ কোটি ১ লাখ টন।’

ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ জানান, এবার বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর চাল উৎপাদিত হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ টন।