শর্ত সাপেক্ষে তৃতীয় বারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। এর আগে সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর সময় বলা হয়েছিল, বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। তবে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে সরকার।

এখন দেশের মধ্যে নিজের পছন্দমতো যেকোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন তিনি। চাইলে যে কারো বাসায় যেতেও পারবেন। তবে মানতে হবে আগের দেয়া দুই শর্ত। ৭৬ বছর বয়সী অসুস্থ খালেদা জিয়া কোথায় চিকিৎসা নেবেন এটা নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। করোনা মহামারির কারণে নিজ বাসায় থেকেই খালেদা জিয়া নিজের চিকিৎসা নেবেন বলে জানা গেছে।

সমপ্রতি দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া কতটুকু নিরাপদ হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি ও তার পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, করোনার কারণে ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সচেতনতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকরা তার বাসায় আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি কতোটুকু নিশ্চিত করা যাবে- এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। আপাতত তার চিকিৎসা বাসায় দেয়া হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে দেশের যেকোনো হাসপাতালে নেয়া হতে পারে তাকে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা জানান, দেশে ইউনাইটেড হাসপাতাল তার পছন্দ। এখানে তিনি আগেও চিকিৎসা নিয়েছেন। এখানকার চিকিৎসকও তার পরিচিত। তার বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে সেখানকার চিকিৎসকদের। তাই বাসার বাইরে চিকিৎসা নিলে তিনি এ হাসপাতালেই নেবেন। তবে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যার চিকিৎসা আগে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের রিয়াদে। ফলে এসব রোগের ফলোআপ চিকিৎসাও আগের হাসপাতালে নিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি না থাকায় তাকে এখন দেশের হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে হবে।

নাম প্রকাশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, বাসা থেকেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা নিতে হবে এই অবস্থান থেকে সরকার সরে এসেছে, এটা পজেটিভ দিক। গত ৮ই মার্চ খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ ফের বাড়ানোর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পর তার চিকিৎসার বিষয়ে নতুন করে আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের প্রধান ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। তবে খালেদা জিয়া কোথায় চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এ বিষয়ে তার মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ চিকিৎসক আরো বলেন, খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন রোগের মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিয়মিত তার রুটিন চেকআপও করা যাবে। তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে তা সম্ভব হচ্ছে না।

পরিবার এবং চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো আগের মতোই। তিনি নিজে চলাফেরা করতে পারছেন না। দলের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। লন্ডন থেকে চিকিৎসায় সমন্বয় করছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। গুলশানের বাসভবন ফিরোজার দোতলায় নিজের রুমেই থাকেন খালেদা জিয়া। করোনাভাইরাসের কারণে দলের তেমন কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন না। তবে স্বজনরা তার বাসভবনে যান। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা প্রতিদিন যান। বাসার সবকিছু তিনিই তদারকি করেন। জরুরি কোনো প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা দলের আইনজীবী কোনো নেতাকে তিনি ডেকে পাঠান। তখন তারা সাক্ষাৎ করেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং সাজার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘ওনার সাজা এখন স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত করার মানে হচ্ছে, সাজা কিন্তু ওনার নেই। সাজা এই শর্তে স্থগিত করা হয়েছে যে, ওনি দেশে থেকে চিকিৎসা নিবেন, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এই দুু’টো শর্তে ওনার সাজা স্থগিত করা হয়েছে।’

চাইলে বেগম জিয়া কারো বাসায় যেতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোথাও তো বলা নেই যে, ওনি কারো বাড়িতে যেতে পারবেন না। আমরা তো কখনো ওনাকে বাধা দেইনি। কোভিডের মধ্যে যদি রিস্ক নিতে পারেন তাহলে নিবেন। সী শুড টেক রেসপনসেবিলিটি হার সেল্প। কারো বাসায় গেলে ওনার যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে এর দায়দায়িত্ব সরকার নেবে না।’

খালেদা জিয়া কোথায় চিকিৎসা নেবেন- জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম জিয়ার চিকিৎসা কোথায় হবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। ওনার যারা ব্যক্তিগত চিকিৎসক আছেন তারা যদি মনে করেন হাসপাতালে যেতে হবে তাহলে যাবেন। তবে কোভিডের কারণে আমাদের দেশের হাসপাতালগুলো একদম নিরাপদ না। এই মুহূর্তে ওনাকে হাসপাতালে নেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ওনি ভীষণ অসুস্থ। তার জন্য দেশের চিকিৎসা নেয়া অনেকটাই অসম্ভব।’

সম্প্রতি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তার বোন সেলিমা ইসলাম টেলিফোনে জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসাও আগের নিয়মেই চলছে।-মানবজমিন।