যশোর শহরের দুটি যৌনপল্লীতে রয়েছে প্রায় ৪শ’ নারী। এর এক-তৃতীয়াংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। যাদের একটি বড় অংশ এ পল্লিতেই জন্ম নিয়েছে।বাধ্য হয়েই বংশ পরম্পরায় বেছে নিচ্ছে এ পেশা। অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলেও সামাজিক ও পারিপার্শিক বাস্তবতায় সে সুযোগ হয় না।
শারমিন (ছদ্মনাম) নামের এক কিশোরী জানান, ‘১২-১৩ বছর বয়স থেকেই আমি এ যায়গায়, আজকে আমি এ যায়গায় থাকবো কেনো? যদি নিজের বাপ থাকতো-মা থাকতো তাহলে তো আমি এ যায়গায় থাকতাম না।
তবে সন্তানদের আলোর পথ দেখাতে চান অনেক মা, কিন্তু চারপাশের বাস্তবতা বার বার পিছু টেনে নেয়।
এখানে ৪০-৪৫ বছর ধরে থাকা একজন নারী জানান, ‘সরকারের কাছে আবেদন জানাই যে আমাদের বাচ্চাদের জন্য কিছু একটা করুক’
বেসরকারী সংস্থা ওয়াল্ড ভিষণ ও এডাব যৌনপল্লীর শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়-বলছেন সমাজকর্মীরা।
এ বিষয়ে কথা হয় এডাবের সেক্রেটারী শাহজাহান নান্নুর সাথে তিনি জানান, ‘আমরা যদি ঠিক মতো সাপোর্ট না দিতে পারি তাহলে ৯৯ভাগই মায়ের পেশায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’।
যশোরের শক্তি উন্নয়ন কেন্দ্রের অনিতা বিশ্বাস জানান, ‘পরিবারই যখন ঠিক নেই, তাহলে কিভাবে তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগার করবে, তার খাওয়ার খরচ যোগার করবে তাই বাধ্য হয়ে এ পথে নামা ছাড়া কোনো রাস্তা থাকে না।
এ দিকে যৌনপল্লীতে জন্ম নেয়া শিশুর ব্যপারে সরকারের নীতিমালা না থাকায় পদক্ষেপ নিতে পারছে না সরকারি দপ্তরগুলোও।
এ বিষয়ে যশোরের সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কোহিনূর আক্তার জানান, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই, তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আগামী মিটিং এ বিষয়টি আমি তুলে ধরবো’।
যশোরের মারোমারি ও ঝালাইপট্টির যৌনপল্লীতে বর্তমানে দেড়শতাধিক শিশুর অর্ধেক মেয়ে। বাকী অর্ধেক ছেলে। সমাজকর্মীরা বলছেন ছেলেরা কোনোভাবে এ পেশা থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও মেয়েদের সেই উপায় থাকে না। ফলে বাধ্য হয়েই এ পেশাকেই বেছে নিতে হয় তাদের। এমন পরিস্তিতি উত্তরণে সরকারী পদক্ষেপ আহবান জানিয়েছেন তারা।