শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় রাজধানীর বাজারগুলো থেকে ক্রেতারা বেশিরভাগ সবজি তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারলেও, নতুন আসা পটল ও ঢেঁড়স বাজারে যেন ‘ভিআইপি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বেশিরভাগ সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকার মধ্যে, সেখানে পটল ও ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে। ফলে কেউ কেউ মন্তব্য করে বসছেন, পটল ও ঢেঁড়স এখন ভিআইপিদের খাবার!

শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঢেঁড়স। তবে দাম বেশি হওয়ায় সব বাজারে এই দুটি সবজি পাওয়া যাচ্ছে না।

খিলগাঁও তালতলা বাজারে দেখা যায়, তিনজন ব্যবসায়ী পটল ও ঢেঁড়স বিক্রি করছেন। তাদের প্রত্যেকের কাছে এই দুই সবজি পরিমাণে তুলনামূলক কম। তিনজনই পটল ও ঢেঁড়সের কেজি একশ টাকা চান।

তাদের একজন ইদ্রিস আলী বলেন, পটল ও ঢেঁড়স বাজারে নতুন আসা শুরু হয়েছে। এ কারণে এখন দাম বেশি। কয়েক দিন গেলে দাম কমে আসবে। আপাতত কিছু ক্রেতা শখের বশে এই দাম দিয়ে পটল ও ঢেঁড়স কিনে খাবেন। সবাই এই দাম দিয়ে কিনবে না। এ কারণে কম করে এনেছি। তাছাড়া পাইকারি বাজারেও কম পাওয়া যাচ্ছে।

মালিবাগ হাজীপাড়া বৌবাজারে প্রায় ৫০ জন সবজি বিক্রি করেন। তবে এই বাজারের কোনো দোকানে পটল ও ঢেঁড়সের দেখা মেলেনি।

এ বিষয়ে মো. শরিফ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এই বাজারের বেশিরভাগ ক্রেতা নিম্ন আয়ের মানুষ। একশ টাকা কেজি দামে এখানে পটল-ঢেঁড়স বিক্রি হবে না। এখন পটল-ঢেঁড়স ভিআইপিদের খাবার। দাম কমলে তখন সাধারণ মানুষ খাবে।

রামপুরা বাজারে ১২০ টাকা কেজি পটল বিক্রি করা আলী হোসেন বলেন, আড়তে অনেক খুঁজে ৫ কেজি পটল কিনেছি। বেশি দামে কেনা, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। দাম মতই কিছু ক্রেতা আছেন স্বাদ পরিবর্তন করার জন্য কিনে নিয়ে যাবেন। কিছুদিন পর হয় তো ৪০ টাকা কেজিতে পটল বিক্রি হবে, সেই পটলের স্বাদ আর এই পটলের স্বাদ এক হবে না।

কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যবসায়ী ৮০ টাকা কেজিতে পটল ও ঢেঁড়স বিক্রি করছেন। হায়দার নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন বাজারে বেশিরভাগ সবজি ২০-৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পটল ও ঢেঁড়স নতুন আসায় দাম বেশি। সরবরাহ বাড়লেও এ দুটি সবজির দামও কমে যাবে। তখন হয় তো অন্য সবজির দাম বাড়বে।

এদিকে শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় সবজির দামে খুব একটা হেরফের হয়নি। আগের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা।

এছাড়া মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, বেগুনের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজরের কেজি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাউয়ের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস।

সবজির মতো সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ, আলু, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। এক ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে ৯৫ টাকায়। বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা।

এদিকে সরকার দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন ও পাম তেল। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিনের (খোলা) খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা। বোতলের প্রতি লিটার সয়াবিনের খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা। বোতলের ৫ লিটারের মূল্য ৬২৫ টাকা। আর পাম সুপারের প্রতি লিটারের মূল্য ১০৪ টাকা।

তবে গত কয়েকদিনের মতো খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেল ১৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬৬০ টাকার ওপরে। কোম্পানি ভেদে ১৩৫-১৪০ টাকায় বোতলের এক লিটার সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে।