চলতি বছরের ১৯ মার্চ শেষ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ও বর্তমান উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের মেয়াদ। কে হবেন জবির পরবর্তী উপাচার্য, এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সবার মাঝে পরবর্তী উপাচার্য নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
তবে জবি শিক্ষার্থীদের দাবি, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়েই অনেক সিনিয়র ও যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন। তাই পরবর্তী উপাচার্য নিজেদের ভেতর থেকেই দিতে হবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১০৫ জন অধ্যাপক আছেন। গ্রেড-১ পদমর্যাদায় আছেন ২৬ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য, ট্রেজারারসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। সুতরাং তাদের মধ্য থেকেই কাউকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পঞ্চম উপাচার্য নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
ইতোমধ্যে নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল দুই মেয়াদের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে না বলে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ড. মীজানুর রহমান দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল পরবর্তী উপাচার্যের জন্য নিজেদের মধ্যে এক ডজনের বেশি একটি নামের তালিকা ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় জমা দিয়েছেন। এ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ডিন, সাবেক ডিন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, নীলদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের নাম রয়েছে।
এছাড়া কয়েকজন শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছেন।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ্ বলেন, বর্তমান উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কিছু চিনে ফেলেছেন। সরকার তাকে যদি তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব না দেয় তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে থেকেই যেন উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ১৫ বছর বয়সী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র ও যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার জন্য।
নীলদলের একাংশের সভাপতি অধ্যাপক জাকারিয়া মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমারও দাবি থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকে অনেকে উপাচার্য হওয়ার মতো যোগ্য রয়েছেন। সরকার যোগ্যদের থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেবেন বলে আশা করছি।
নীলদলের আরেকাংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, সরকার যাকে ইচ্ছে তাকেই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিক উন্নয়ন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, ১৫ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পথ এগিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শতাধিক অধ্যাপক আছেন, যাদের মধ্য থেকে অনেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখেন। তাদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হলে তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সুখ, দুঃখ, বেদনা ও সমস্যা বুঝতে পারবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করবেন।
ছাত্র ইউনিয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি কে এম মোত্তাকি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দক্ষ প্রশাসক ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক রয়েছেন। তারাও উপাচার্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। সরকারের উচিত হবে শিক্ষার্থীবান্ধব ও যোগ্য একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া।
ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাইসুল ইসলাম নয়ন বলেন, আমরা আর ভাড়াটে উপাচার্য চাই না। বর্তমান উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের সময় আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। আমরা এ উপাচার্যকে আর চাই না। আমরা জগন্নাথ থেকেই উপাচার্য চাই। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা সমস্যা সম্পর্কে অবগত। তারাই শিক্ষার্থীদের সমস্যা ভালো বুঝবেন।
জানা যায়, ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান একেএম সিরাজুল ইসলাম খান প্রথম উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৭ সালের ২০ মার্চ তিনি আবার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পান। আগামী ১৯ মার্চ তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে।