জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশ হাঙ্গেরি। তারা আমাদের কাছে আবেদন করেছে ৫ হাজার ডোজ ভ্যাকসিনের। প্রধানমন্ত্রী সদয় সম্মতি দিয়েছেন। আমাদের স্টক থেকে ৫ হাজার ভ্যাকসিন হাঙ্গরির ভাই-বোনদের বন্ধুদের জন্য আমরা পাঠিয়ে দেব।

তিনি আরও জানান, পৃথিবীতে মাত্র ২২টি দেশ ভ্যাকসিনের কার্যক্রম শুরু করেছে ও পৃথিবীর মাত্র ৩৫টি দেশ ভ্যাকসিন কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পেরেছে। তারমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

রোববার (৩১ জানুয়ারি) সকালে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম একথা বলেন।

ভ্যাকসিন নিয়ে গুজব সৃষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করব গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। বিএনপি-জামায়াতের প্রতিটি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সেই আইন প্রয়োগ করার সময় এসেছে। ভ্যাকসিন নিয়ে কত মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, হাঙ্গেরি পৃথিবীর প্রথম শ্রেণির একটি রাষ্ট্র। তারা ভ্যাকসিন পায়নি। আর একটি চিঠি পেয়েছি বলিভিয়া থেকে। তারা বাংলাদেশ থেকে ভ্যাকসিন নেবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি তারা সম্মতি দেন, আমরা সেটাও পাঠাব। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ভ্যাকসিনের বন্দোবস্ত জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার করেছেন। যেখানে পৃথিবীর ৩০টি দেশ এখনো করতে পারেনি। এটা কি যথেষ্ট নয়?

ডেপুটি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপনারা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, আজকে সংসদ গ্যালারিতে মুক্তিযোদ্ধারা আছেন। সেক্টর কমান্ডাররা উপস্থিত আছেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি, মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু আপনারা যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সেই স্বপ্ন মনে হচ্ছিল আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল এই স্বপ্ন কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে না। আমাদের প্রজন্ম যেটাকে বলি ভুল সময়ে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম। ১৯৭৫ সালে আমি ক্লাস ওয়ানের ছাত্র ছিলাম। তার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে উল্টো পথে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিহাসকে মুছে ফেলে বিশেষ স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য ভুল তথ্য দিয়ে পাঠ্যবই পরিবর্তন করা হয়েছে। সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু সেই সব সংঙ্কা দূরে ঠেলে দিয়ে ভুল প্রমাণিত করে বীর সেনানীর মতো উত্থান হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন দেশের মাটিতে পা দিলেন। তার আগে লন্ডনে গিয়েছিলেন। লন্ডনে পা দিয়েই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি জানেন না তার পরিবারের কথা, তিনি জানেন না সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির কথা, তিনি জানেন না মুক্তিযুদ্ধে কে শহীদ হয়েছে, কে বেঁচে আছে। কিন্তু জানেন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বিশাল একটা ঝড় বয়ে গেছে।

পরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ পালন করছি। এই শতবর্ষে বাংলাদেশ যে লক্ষ্যে এগিয়ে চলছিল গত ১২ বছর। সেই লক্ষ্যে একেবারে সুনির্দিষ্ট বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে। কোনো চক্রান্ত কোনো কিছুই তাকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি এবং পারবে না।

কোভিড-১৯ সত্যিকার অর্থে প্রমাণ করে দিয়েছে, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যে লড়াই সংগ্রাম সেখানেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এক নম্বর রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, গোটা বিশ্বের ২০তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে এতো কথা বলছেন, বিরোধী দল বলা ঠিক হবে না। একসময় অপরাজনীতি যারা কায়েম করেছেন সেই বিএনপি জামাতের।