সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ইতালি। এসব দেশকে অস্ত্র দিলে সেগুলো নিরীহ ইয়েমেনিদের রক্ত ঝরাতে ব্যবহৃত হবে আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালীয় কর্তৃপক্ষ।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িত থাকায় সৌদি ও আমিরাতের কাছে বছর দেড়েক আগে সাময়িকভাবে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেছিল ইতালি। শুক্রবার সেই সিদ্ধান্তকেই স্থায়ী রূপ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
এদিন ইতালীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি দি মাইও বলেছেন, আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি যে, সরকার সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা রফতানির অনুমতি প্রত্যাহার করেছে।
তিনি বলেন, এই কাজটি আমরা যথাযথ বলে বিবেচনা করেছি। এটি আমাদের দেশ থেকে শান্তির পক্ষে পরিষ্কার বার্তা। মানবাধিকারের প্রতি সম্মান আমাদের একটি অটুট প্রতিশ্রুতি।
এদিন ঘোষণার সময় ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি ইয়েমেনের নাম উচ্চারণ করেননি। তবে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে অস্ত্র বিক্রিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময় ঠিকই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
ইতালির পিস অ্যান্ড ডিসআর্মানেন্ট নেটওয়ার্ক নামে একটি গ্রুপ সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের ধারণা, সরকারের এ আদেশের ফলে ১২ হাজার ৭০০টিরও বেশি অস্ত্র বিক্রি বাতিল হতে পারে।
সৌদির কাছে রফতানি বন্ধ হওয়া অস্ত্রের মূল্য অন্তত ১০৫ মিলিয়ন ইউরো এবং আমিরাতের জন্য এর পরিমাণ প্রায় ৯০ মিলিয়ন ইউরো।
ইতালি থেকে চিরদিনের জন্য অস্ত্র আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ইতালির ঘোষণার মাত্র দু’দিন আগে গত বুধবার সৌদি-আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার শেষবেলায় অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই দেশ দু’টির কাছে অত্যাধুনিক ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ বিক্রির অনুমোদন দেন। তবে বাইডেন প্রশাসন দায়িত্বগ্রহণের সপ্তাহখানেক পরেই সেটি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে, ইয়েমেন যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে সৌদি-আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকাও।
গত পাঁচ বছর ধরে ইয়েমেনি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সৌদি জোটের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ, ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েক লাখ। গত কয়েক দশকের মধ্যে ইয়েমেনেই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।