মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে এক বন্দিকে নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। নারী সঙ্গীকে এনে এক বন্দির একান্তে সময় কাটানোর ঘটনা সামনে আসায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় জেল সুপার, জেলার থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কারারক্ষীরা টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

জানা যায়, গত ৬ জানুয়ারি এ ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের কাশিমপুর-১ কারাগারে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতা তানভীরের অন্যতম সহযোগী তুষার টাকার বিনিময়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। দেখা যায়, কারাগারে প্রবেশ পথে কর্মকর্তাদের কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায় কালো রঙের জামা পরে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন ঋণ কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ। তিনি সেখানে আসার কিছু সময় পর বাইরে থেকে বেগুনি রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা এক নারী সেখানে প্রবেশ করেন। কারাগারের ভেতরে তুষারের সঙ্গে নারীর ভিডিও চিত্র একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। অবশ্য তুষারের দাবি, ওই নারী তাঁর স্ত্রী। শত শত কোটি টাকা প্রতারণার দায়ে কাশিমপুর-১ কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ডেপুটি জেলার সাকলাইন, প্রধান কারারক্ষী ও একজন সুবেদারকে ক্লোজ করে কারা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। জেল সুপার রত্না রায় ও জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে কারা অধিদপ্তরের গঠন করা কমিটিতে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স কর্নেল আবরার হোসেনকে প্রধান করা হয়েছে। বাকি দুজন হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব ও কারা বিভাগের একজন ডিআইজি প্রিজন্স। অন্য কমিটি গঠন করেছে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের দপ্তর।

জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স কর্নেল আবরার হোসেন গতকাল বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত চলাকালে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি কাশিমপুর-১ কারাগারে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। অভিযুক্ত বন্দি তুষারের সঙ্গেও কথা বলেছেন তাঁরা।

সূত্র জানায়, তুষার তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, ওই নারী তাঁর স্ত্রী। তাঁর এ দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

করোনার কারণে দেশের সব কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে গত বছরের মার্চ মাস থেকে। শুধু মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় এ ঘটনা ঘটল।

জানা গেছে, জেলার ও ডেপুটি জেলার দোষ দিচ্ছেন জেল সুপার রত্না রায়কে। ডেপুটি জেলার সাকলাইন ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, জেল সুপারের নির্দেশেই তিনি ওই নারীকে ভেতরে রিসিভ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬ জানুয়ারি দুপুরে কাশিমপুর-১ কারাগারের ডেপুটি জেলার সাকলাইন এক নারীকে স্বাগত জানান এবং একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখান থেকে সাকলাইন বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর বন্দি তুষার ওই কক্ষে যান। ১০ মিনিট পর জেল থেকে বেরিয়ে যান জেল সুপার রত্না রায়। পরে তুষার ও ওই নারী রত্না রায়ের কক্ষের দিকে যান। যাওয়ার সময় তুষার জড়িয়ে ধরেন নারীকে। কিছুক্ষণ পর তাঁরা আগের কক্ষে ফিরে যান। ভেতরে তাঁরা ৪৫ মিনিট সময় কাটান।

যেভাবে বেরিয়ে এলো ঘটনা: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই একটি গোয়েন্দা সংস্থা খবর পেয়ে যায়। এ নিয়ে তারা কাজে নেমে পড়ে। এ অবস্থায় ১২ জানুয়ারি জেল সুপার রত্না রায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এর পরই গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কমিটির তদন্ত চলার সময় বেসরকারি একটি টিভি সিসিটিভি ফুটেজ পায়।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, রত্না রায় কিছু জানেন না বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন। এখন জেলার ও জেল সুপার একে অন্যকে দুষছেন। তবে সূত্রের দাবি, ঘটনার সঙ্গে সবাই জড়িত এবং টাকার ভাগও পেয়েছেন সবাই। তবে টাকার অঙ্ক জানা যায়নি। জানার চেষ্টা চলছে।