নিজের বেকারত্ব দূর করার চিন্তা থেকে হাঁস পালনের সিদ্ধান্ত নেন যুবক হাসান। প্রথমে ২৫০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন। এখন তার প্রতি মাসে আয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সেই বেকার যুবক হাসান এখন হাঁসের খামার থেকে বছরে ৪ টাকা আয় করেন। হাঁস পালন করে এখন অনেকেরই ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করছেন তিনি।

এ কারণে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মো. হাসানের সফলতা এখন সবার মুখে মুখে। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, করোনার শুরুর দিকে ঘরবন্দি হওয়ার পর অভাব অনটনের দেখা দিলে হ্যাচারি থেকে ২৫০টি হাঁস ক্রয় করে শুরু করেন হাঁস পালন।

অর্থনৈতিক পিছু টানের মধ্যে দিয়েও পিছ পা হননি হাসান। করোনায় দেশব্যাপি বন্ধের সময় হাতে কোনো কাজ না থাকায় নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছিল পরে ধার দেনা করে হাঁসের খাবার ক্রয় করতে হয়েছিল। টাকা বাকি পড়েছিল ছিল স্থানীয় দোকানেও।

এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি, এভাবেই শুরু হয় হাসানের হাঁসের খামারে পথ চলা। এখন হাসানের খামারে প্রায় ৫শ হাঁস আছে। প্রতিদিন হাঁসগুলো গড়ে ১৫০টি ডিম দেয়। প্রতিটি ডিম ১০ টাকা দরে বিক্রি করে আয় করেন ১৫০০ টাকা। এ ছাড়াও ৩ মাস পর তিনি প্রতিটি হাঁস বিক্রি করতে পারেন ৩০০-৩৫০ টাকা করে।

হাসান হ্যাচারি থেকে প্রতিটি হাঁস ক্রয় করেন ২৫-২৮ টাকা দরে। পরিপক্ক হতে খাদ্য ও ঔষধ বাবদ সর্ব সাকুল্যে খরচ হয় ১৫০টাকা। এবার করোনার প্রভাবে হাঁসের ঔষধ ও খাবারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় হাঁস পালন করে তিনি ক্ষতিগ্রস্থও হয়েছেন প্রথম দিকে।

হাসান বলেন, করোনার সময় সংসারে অভাব দেখা দেয়। কোনো কাজও খুঁজে না পেয়ে চিন্তা করে কিছু হাঁস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। নিজে না খেয়ে সন্তানের মত হাঁসগুলোকে লালন-পালন করেছি। আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন। এখন প্রতিদিন টাকার দেখা পাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, হাঁসের খাবারের পিছনে খুব একটা বেশি খরচ করতে হয় না। বিলে হাঁসগুলো ছেড়ে দেই আবার সন্ধ্যার দিকে বিল থেকে নিয়ে আসি। তবে প্রতিদিন ঔষধ দিতে হয়। প্রতি মাসে ডিম ও হাঁস বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে তার আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ দিয়েই ভালোভাবে সংসার চলছে হাসানের। তবে খামারের প্রসার ঘটাতে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা তার।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন খান বলেন, হাসানের হাঁসের খামারটি দেখতে অনেকেই আসছেন। এটি দেখে কেউ কেউ আবার হাঁসের খামার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাছাড়া আমাদের গ্রামের মানুষের ডিম বা হাঁস কিনতে বাজারে যেতে হয় না।

পাশ্ববর্তী গ্রামের যুবক মো. ফতে আলী বলেন, আমি হাসান ভাইর হাঁসের খামার দেখতে এসেছি। আমার ইচ্ছে আছে এ এরকম একটি খামার করার। স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবু জগৎ জীবন রায় জানান, খোলা বিলে হাঁস পালন করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি আর্থিক সংকট দূর করেছেন যুবক হাসান।

এ বিষয়ে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যাড. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, হাসানের হাঁস খামারটি দ্বারা নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করেছেন।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনওয়ার হোসেন বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। স্বল্প খরচে হাঁস চাষ করে বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি প্রচুর আয় করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, প্রাণীসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে হাঁস পালনকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হয়। ডিম ও হাঁসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় খামারিরা।