সাক্ষীরা আদালতে না আসায় আটকে আছে তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের বিচারকাজ। ৮ বছর কেটে গেলেও এ মামলায় অগ্রগতি সামান্য। আদালত বার বার সাক্ষীদের আনার তাগিদ দিলেও পুলিশ সময়মতো সাক্ষী হাজির করতে পারছে না।

২০১২ সালের এই দিনে রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১২ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ। এ ঘটনায় পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম একটি মামলা করেন।

২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। এখন পর্যন্ত ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত আগামী ১৩ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিধ ধার্য করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করছে, সাক্ষীদের বর্তমান ঠিকানায় অধিকাংশকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব সাক্ষীর স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হয়েছে তারা সঠিকভাবে আদালতের সমন পাচ্ছেন না। তবে অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকরা বলছেন, মামলার বিষয়ে তাদের কেউ কিছু জানায় না। সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয় না। ডাকলে অবশ্যই সাক্ষ্য দিতে যেতাম। ইতিমধ্যে এই মামলায় যে ৮ জন সাক্ষী দিয়েছেন- মামলার এজাহারকারী এস আই মো. খায়রুল ইসলাম, সাক্ষী রেকর্ডিং অফিসার মো. শাহ জালাল, জব্দ তালিকা (পার্শ্ববর্তী মালিক) মো. সোনা মিয়া মণ্ডল, পাবলিক (সুইং অপারেটর) মাহে আলম, পাবলিক (অপারেটর) মোসা লাইলী বেগম, রাকিব হাসান, সুবল মণ্ডল এবং এস আই আবিদ হোসেন। এখনো বাকি আছে ৯৬ জন সাক্ষী।

চার্জশিটে দেখা যায়, এই মামলার ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাক্ষীই সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ কর্মকর্তার এখনো সাক্ষী নেয়া হয়নি। আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম বদরুল আলম (পিপিএম), পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোস্তফা কামাল, সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী এস আই রবিউল আলম, এস আই মালেক খসরু খান, এস আই মো. আবিদ হোসেন, এস আই মো. শফিকুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম, এস আই মো. মনিরুজ্জামান, এস আই মমিনুল হক, এস আই আরাফাত হোসেন, এস আই মনিরুজ্জামান এবং এস আই আবিদ হোসেনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি কর্মকর্তা।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মান্নান খান বলেন, সাক্ষীদেরকে পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার চার্জশিটে দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী অধিকাংশ সাক্ষী বসবাস করেন না। যে কারণে সাক্ষীর ঠিকানায় সমন পাঠানো হলেও তারা সমন পাচ্ছেন না। আদালতও সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিতে সমস্যা হচ্ছে।

নথি থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪শে নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন মারা যান। আহত ও দগ্ধ হন দুই শতাধিক শ্রমিক। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন বলেন, তাজরীনে আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।

মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ১৩ জন আসামির মধ্যে ৫ আসামি পলাতক ও ৮ আসামি জামিনে আছেন।

আসামিরা হলেন—প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান দুলাল। মো. শহিদুজ্জামান দুলাল, মোবারক হোসেন মঞ্জু, মো. রানা ওরফে আনারুল, মো. শামিম মিয়া ও আল আমিন পলাতক আছেন।