করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। গত সাতদিনে (৪৮তম সপ্তাহ) এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পূর্ববর্তী দুটি সপ্তাহ (৪৭ ও ৪৬তম) করোনায় যথাক্রমে মৃত্যু হয় ১৭৭ ও ১২৪ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪৬তম সপ্তাহের চেয়ে ৪৭তম সপ্তাহে ৫৩ জন এবং ৪৭তম সপ্তাহের তুলনায় ৪৮তম সপ্তাহে আরও ৫৩ জন বেশি রোগী মারা গেছেন। গত এক সপ্তাহে মৃত্যুহার ২৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। অধিকাংশ মৃত্যুই হাসপাতালে। একইসঙ্গে বাড়ছে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা, রোগী শনাক্ত ও সুস্থতার হার।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হারও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার প্রায় ৪৩ শতাংশ (৪২ দশমিক ৭৪ শতাংশ) বেড়েছে। একইসঙ্গে নমুনা পরীক্ষার হার, শনাক্ত ও সুস্থতার হার বেড়েছে।
জানা গেছে, ৪৭তম সপ্তাহে (১৫ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত) এক লাখ ৮ হাজার ৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন শনাক্ত হয় ১৪ হাজার ৭৮৫ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন ১২ হাজার ৫০৩ জন।
৪৮তম সপ্তাহে (২২ থেকে ২৮ নভেম্বর) এক লাখ ৮ হাজার ৩৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন শনাক্ত হয় ১৫ হাজার ৩৩৮ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন ১৩ হাজার ৩২৪ জন।
এর পূর্ববর্তী ৪৬তম সপ্তাহে (৮ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত) ৯৭ হাজার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ১১ হাজার ৭৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১১ হাজার ২৮১ জন সুস্থ হয়ে ওঠেন।
৪৭ ও ৪৮তম সপ্তাহের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার হার শূন্য দশমিক তিন শতাংশ, শনাক্তের হার তিন দশমিক ৭৪ এবং সুস্থতার হার ছয় দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৮ ও নারী ৮ জন। সবাই হাসপাতালেই মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ছয় হাজার ৫৮০ জনে।
সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১১৮টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৩ হাজার ৭১৮টি। আগের নমুনাসহ মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ১২টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৭ লাখ ৪৩ হাজার ৫৯২টি। একই সময় নতুন করে শনাক্ত হন এক হাজার ৯০৮ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল চার লাখ ৬০ হাজার ৬১৯ জনে।
আরও বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ২০৯ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন তিন লাখ ৭৫ হাজার ৮৮৫ জন।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। রোগী শনাক্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত ৬ হাজার ৫৮০ জন মধ্যে পুরুষ ৫ হাজার ৫২ জন (৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ) ও নারী এক হাজার ৫২৮ জন (২৩ দশমিক শূন্য ২২ শতাংশ)।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৩৬ জনের মধ্যে দশোর্ধ্ব একজন, বিশোর্ধ্ব একজন, ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব একজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১০ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ২৩ জন রয়েছেন।
বিভাগ অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৩৬ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩০ জন, চট্টগ্রামে একজন, খুলনায় তিনজন, বরিশালে একজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন।