সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলের কর্তৃত্ব নিয়ে যে দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছিল তা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে জাতীয় পার্টি। এখন দল গুছানোর পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করছেন পার্টির নেতারা। এজন্য নতুন জোট করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে যোগাযোগ চলছে। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুগুলোর ওপর নজর রাখছেন জাপা নেতারা।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ধর্মীয় ইস্যুগুলো মানুষের মনে নাড়া দিচ্ছে বেশি। বিশেষ করে ফ্রান্স ইস্যুতে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কার্যক্রম দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে। এই মুহূর্তে জাপার কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধর্মভিত্তিক দলগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বেশকিছু রাজনৈতিক দলও জাপার সঙ্গে জোটে ভিড়তে আগ্রহী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে কি হয়েছে তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। গোটা জাতি দেখেছে সেখানে কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন এখনো অনেক দূরে। আপাতত জোটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে দলের স্বার্থে এবং প্রয়োজনে জোট হতে পারে।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল জাপার সঙ্গে জোট গঠন করতে আগ্রহী। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে এসব দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এই জোটের চূড়ান্ত রূপরেখা প্রস্তুত হতে পারে এবং জানুয়ারিতে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঘোষণা হতে পারে।
জাপা নেতারাও মনে করেন, রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে এদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ ছাড়াও সরকারিভাবে মসজিদের বিদ্যুতের বিল মওকুফ ও শুক্রবারকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণার কারণে মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে ক্রমেই প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এরশাদ। রেডিও-টেলিভিশনে নামাজের আগে আজান সমপ্রচারের কোনো ব্যবস্থা বাংলাদেশে ছিল না। এরশাদের নির্দেশেই রেডিও এবং টেলিভিশনে সর্বপ্রথম আজান সমপ্রচার চালু হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে গঠন করা হয় সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক জোট ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’।
এ জোটের কেবল জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ছিল। এর সঙ্গে ৩৫টি দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ইসলামী মহাজোট এবং ৩১ দলের সমন্বয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) নিয়ে মোট ৬৮টি দল নিয়ে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ গঠন করা হয়। কিন্তু এ জোট গঠনের ১০ দিনের মধ্যে জোট ছেড়ে চলে যায় ১১টি দল। এরপর ৫৭ দলের সমন্বয়ে চলতে থাকে জাপার জোট। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ভোট করলে এ জোট অনেকটা বিলীন হয়ে পড়ে। সূত্র-মানবজমিন।