করোনা মহামারির কারণে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবার আঙিনায় জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সাক্ষী এই শতাব্দীর মানুষ। জীবনে এমন কিছু দেখতে হবে তা কল্পনায়ও আসেনি। তারপরও দীর্ঘ সাত মাস পবিত্র এ আঙিনা থেকে দূরে থাকতে হয়েছে মুসলমানদের। অবশেষ আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে আবারও বায়তুল্লাহর প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য। ফলে ফলে ধীরে কাবা প্রাঙ্গণ ফিরছে তার চিরচেনা রূপে।

রোববার (১৮ অক্টোবর) থেকে উমরা চালুর দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা মতে, এ দিন থেকে দৈনিক ১৫ হাজার মুসল্লি উমরা পালনের সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে মসজিদে হারামে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। উমরার দ্বিতীয় ধাপে প্রবাসীসহ সৌদি আরবের মোট আড়াই লাখ নাগরিক এই সুযোগ পাবেন।

৪ অক্টোবর থেকে দৈনিক ৬ হাজার মানুষ উমরা পালন করার সুযোগ পাচ্ছেন।

এ দিকে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উমরা শুরুর প্রথম ধাপ অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপে উমরা পালনকারীদের মধ্যে কারও শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। উমরা শুরুর প্রথম ১৩ দিনে ৭৫ হাজার মুসল্লি উমরা পালন করেছেন।

উমরা পালনকারীদের যাবতীয় নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। হারামাইন কর্তৃপক্ষ উমরাকারীদের মাঝে বিভিন্ন উপহার বিতরণ করেছেন। এ কাজে মসজিদের হারামের ইমাম ও খতিবরা অংশ নিয়েছেন। ফলে উমরাকারীদের মধ্যে সাহস সঞ্চারিত হয়েছে।

১ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া উমরার তৃতীয় পর্বে সৌদি আরবের বাইরের দেশের নাগরিকরাও উমরা করার সুযোগ পাবেন। এ সময় থেকে প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষকে উমরা পালন এবং মসজিদে হারামে ৬০ হাজার মানুষকে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে উমরা পালনের অনুমতির জন্য ‘ইতামারনা’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়।

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মহামারি করোনাভাইরাসে পুরোবিশ্ব আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পবিত্র নগরী মক্কায় উমরা পালন স্থগিত করা হয়।

নতুন ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত উমরাকারীদের মসজিদে হারামে প্রবেশের ১৫ মিনিট আগে নির্ধারিত চেকপয়েন্টে উপস্থিত হয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে নির্দিষ্ট গেইট দিয়ে মসজিদে হারামে প্রবেশের সুযোগ পান।

উমরা চলাকালীন কাবা শরীফের আঙিনা দিনে ১০ বার জীবাণুমুক্তকরণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। উমরা পালনের আগে প্রত্যেককে জীবাণুমুক্ত করা এবং বোতলে জমজমের পানি দেওয়া হচ্ছে। এখনও ‘হাজারে আসওয়াদ’ বা পবিত্র ‘কালো পাথর’ স্পর্শ বা চুম্বনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং কাবা শরীফের চারপাশে বসানো অস্থায়ী প্রাচীরের বাইরে থেকেই তাওয়াফ করতে হচ্ছে।

এ ছাড়া উমরা পালনকারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে। কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে তাদের জন্য রাখা হয়েছে আইসোলেশন ব্যবস্থা। এসব সেবা নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক দলকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আপাতত ৬ ধরনের রোগে আক্রান্তদের উমরা না করার পরামর্শ দিয়েছে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক. যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম, দুই. যারা গত ছয় মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তিন. যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, চার. যাদের হৃদরোগ রয়েছে, পাঁচ. যাদের হার্টের অবস্থা দুর্বল ও ছয়. যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যারা মোটা বা লিভার ডিজিজ, ক্রেনিয়াল রোগে আক্রান্ত- তারা উমরা পালনে কিছু সময় নিতে পারেন। গর্ভবতী নারীদের উমরা ও জিয়ারতের জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করা উচিত।