সেনাবাহিনী দেশের সম্পদ ও মানুষের ভরসা বিশ্বাসের প্রতীক মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনাদের সকলকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে থেকে সৎ ও মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ এরা তো আপনাদেরই আপনজন। আপনাদের পরিবারেরই সাথী। কাজেই তাদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আপনাদের কাজ করতে হবে।

রোববার (১১ অক্টোবর) সকালে সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিট/সংস্থাকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সাভার সেনানিবাসে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে আমাদের সেনাবাহিনীসহ সকল বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে আধুনিকায়নে এবং যুগের সাথে সাথে তারা তাল মিলিয়ে চলতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কারণ এই প্রতিরক্ষা নীতিমালা জাতির পিতা আমাদেরকে দিয়ে গেছে, সেখানে একটা সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনাও ছিল। আর সেটাই আজকে আমরা অনুসরণ করে যাচ্ছি।

পতাকা, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই পতাকা। এই পতাকা হচ্ছে একটি জাতির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। এই পতাকার মান রক্ষা করা, প্রত্যেকেরই দায়িত্ব। প্রতিটি সৈনিক এবং আমি মনে করি সকল জনসাধারণ সবারই দায়িত্ব এই পতাকার মর্যাদা রক্ষা করা। কারণ এটাই হচ্ছে আমাদের একটা প্রতীক, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের। আর জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যেকোন ইউনিটের জন্য একটি সম্মান ও গৌরবের বিষয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে যাতায়াত সীমিত হয়ে গেছে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চেয়েছি,  আপনারা সময়মতো যেন পতাকাপ্রাপ্তির অধিকারটা অর্জন করেন, যেন বঞ্চিত না হন। আপনারা এই গৌরব অর্জন করেছেন, আমি আশা করি, জাতির আস্থা বিশ্বাস অটুট থাকবে, দেশ সেবায় আপনারা আত্মনিয়োগ করবেন। দেশ মাতৃকার সেবা করাটাই হচ্ছে সবথেকে বেশি গৌরবের। কাজেই আপনারা সেইদিকেই বিশেষ মনোনিবেশ করবেন।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। আর আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বা আমাদের সেনাবাহিনী শুধু এখন শুধু আর আমাদের দেশে সীমাবদ্ধ না। আমরা জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনেও অবদান রেখে যাচ্ছি। তাই আমি সবসময় চেয়েছি, আমাদের সেনাবাহিনী বা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সবসময় আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সুপ্রশিক্ষিত একটি সেনাবাহিনী গড়ে উঠুক। যেটা জাতির পিতা তার ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতিমালাও বলে গেছে। কাজেই সেভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।

১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠন করে সেনাবাহিনীর উন্নতির লক্ষ্যে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী সবসময় মানুষের পাশে আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। করোনাভাইরাসে দীর্ঘ কয়েকমাস যাবত আমাদের সেনাবাহিনী ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

বিশেষ ভুমিকা পালন করে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা চাই শান্তি, জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি দিয়ে গেছে সকলে সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরীতা নয়। আমরা কারো সাথে বৈরীতা চাই না। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি। বাংলাদেশ যেন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে উঠে। সে লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কাজেই আমরা বিশ্বশান্তি স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় সবসময় নিবেদিত প্রাণ। তাই জাতিসংঘ যখনি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য চেয়েছে পুলিশ বাহিনী চেয়েছে আমরা সেটা দিয়ে যাচ্ছি। শুধুমাত্র যেহেতু আমরা বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করি। বিশ্বের মধ্যে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকুক, আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যটা সামনে রেখেই আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি বলেন,  একটি কথা সবসময় মনে রাখতে হবে, আমাদের সংবিধান স্বাধীনতার পর মাত্র নয় মাসের মধ্যে জাতির পিতা আমাদের এই সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। যে সংবিধানে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার সব নির্দেশনা দেয়া আছে। কাজেই সংবিধানকে সমুন্নত রেখে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমি জানি করোনাভাইরাসের কারণে শুধু বাংলাদেশ না, সারাবিশ্বব্যাপী একটা সকলের জন্য একটা স্থবিরতা এসে গেছে। করোনা ভাইরাসে আমরা অনেক আপনজনকে হারিয়েছি। অনেক মানুষকে দেশে বিদেশে প্রবাসে হারিয়েছি।