বেলা ১১টা। চট্টগ্রাম-ফটিকছড়ি রোডে লম্বা গাড়ির লাইন। হাটহাজারী মাদরাসা থেকে চার কিলোমিটার দূরে থেমে থেমে চলছে গাড়ি। রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজারা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আর চারদিক থেকে ছুটে আসছে আল্লামা আহমদ শফী রহমাতুল্লাহি আলাইহির ছাত্র, শিষ্য, ভক্ত ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ। সবার গন্তব্য হাটহাজারী মাদরাসা।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় ভালোবাসা, ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আল্লামা শফীকে শেষ বিদায় দিতে ছুটে আসছেন মানুষ। অঘোষিত এক মহাসম্রাটের বিদায় বলে কথা। শোকার্ত মানুষ দলে দলে কোরআন তেলাওয়াত, খতম ও দোয়া ইত্যাদি করছে। এ দিন আর আসবে না, এ ক্ষণ আর মিলবে না। তাই ভিড় উপচেপড়া, কান্নার রোল পরিবেশকে ভাড়ী করে তুলেছে।
মহামান্য প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদল, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ তার বিদায়ে শোকাহত। আজ কোনো ভেদাভেদ নেই। তার মতো মানুষের মৃত্যুতে সবাই শোকাহত। তিনি আজ সবকিছুর ঊর্ধ্বে, একবুক কষ্ট আর সীমাহীন অভিমান নিয়ে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তবে যাওয়ার সময়ও মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে গেছেন।তিনি কাঁদতে জানেন, কাঁদাতে জানতেন না। এমন গুণ ছিলো বলেই তিনি জাতির সর্বজন মান্য নেতায় পরিণত হয়েছিলেন।
আল্লামা কওমি আলেমদের মর্যাদা রাষ্ট্রীয়ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার হাত ধরে, তার নেতৃত্বে এসেছে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ সনদের সরকারি স্বীকৃতি। বাংলাদেশকে তিনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়।
তাই তার মৃত্যুতে শোকাতুর হয়েছে দেশবাসী। তার মৃত্যুতে কাঁদছে পুরো দেশ। তাই লাখো ভক্তের ভালোবাসায় সিক্ত।
দুপুরের পর তিনি সমাহিত হবেন হাটহাজারীর মাটিতে। বাহ্যত এটা তার শেষ ঠিকানা হলেও তিনি জান্নাতের উঁচু মাকামের অধিকারী। এখানে শুয়ে শুয়ে তিনি শুনবেন রাসূলের হাদিস। কোরআনের সুর, ছাত্রদের দোয়া ও ভালোবাসা।
আল্লামা শফীর ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। তিনি কওমি আলেমদের যে মর্যাদা দিয়ে গিয়েছেন তার কোনো তুলনা নেই। তার অবদান ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমাদের হৃদয়ে চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন আল্লামা শফী। হৃদয়ের আকুতিমিশ্রিত সব ভালোবাসা, শ্রদ্ধা তার জন্য নিবেদিত।
হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়িসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো জানাজায় আগত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মানবিক সেবায় এগিয়ে এসেছে। পথে পথে মানুষকে পানি শরবত পান করাতে দেখা গেছে। হাটহাজারী এবং আশেপাশে এলাকার হোটেল ও খাবারের দোকানে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
জোহরের নামাজের পর হাটাহাজারী মাদরাসা মাঠে আল্লামা শফীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে আল্লামা শফীর অসিয়ত অনুযায়ী মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হবে। ইতোমধ্যে কবর খননের কাজও শেষ হয়েছে।
আল্লামা শফীর নামাজে জানাজার ইমামতি করবেন বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ।
উল্লেখ্য হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানী গেণ্ডারিয়াস্থ আসগার আলী হাসপাতালে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।
তিনি হেফজাতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ছাড়াও কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাক ও কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছিলেন।