ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠ রুদ্ধ উল্লেখ করে আবারও এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) সকালে উত্তরার বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন, সরকারি দলের লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বললে, রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে, সরকারের সমালোচনা করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হচ্ছে। এমনকি যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের কোনো দুর্নীতি কথা, তাদের কোনো বিবেক বর্জিত কীর্তিকলাপের কথাও যদি সোশ্যাল মিডিয়াতে অথবা প্রিন্টিং মিডিয়াতে প্রকাশ করে তাহলে সেই সাংবাদিক বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠ রুদ্ধ। বিএনপি শুরু থেকেই বলে এসেছে এই আইন সংবিধান বিরোধী এবং এটা আইন জনগনের কন্ঠরোধ করার জন্য সরকারের হাতিয়ার। তারা ক্ষমতায় টিকেজ থাকার জন্য এই আইন করেছে। আমরা মনে করি, অবিলম্বে এই আইনটি বাতিল করা উচিত এবং জনগণের চিন্তা-ভাবনা, তার স্বাধীনতার প্রকাশকে নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন যে, সাংবাদিকসহ সবাই এটা (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) নিয়ে প্রচন্ড সমালোচনা করার পরেও ৯৪ শতাংশ মামলা হয়েছে এই বিতর্কিত ’৫৭ ধারায়। জারি হওয়ার দুই বছরের কম সময়ের মধ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিক্রিয়া বেশ লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠছেন। এটাও মনে রাখা দরকার যে, এই আইন কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়।
দেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ প্রক্রিয়ারই একটা অংশ। যখনই কোনো সরকার কর্তৃত্ব পরায়ন হয়ে উঠে, স্বৈরাচারী হয়ে উঠে, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র পরিণত করতে চায় তখনই প্রথম যে আঘাত হানে সংবাদ প্রকাশ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর এবং একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াকে দমন করা। সেটাই এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে, সচেতনতার সঙ্গে করে চলেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান ফখরুল।
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলোর মূল অভিযোগ হলো, ব্যক্তির মানহানি, আক্রমণাত্মক মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন কিংবা রাষ্ট্রের তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ করা, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, এই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা প্রতিনিয়ত কিভাবে বিরোধীদলীয় কিংবা ভিন্নমতাবলম্বীদের সম্মানহানি করছে, কিভাবে আক্রমণাত্মকভাবে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করছে, কিভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এই সরকারের মন্ত্রী-এমপি-আমলা-পুলিশের লুটপাট কিভাবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। এ সরকারের নেতাকর্মীদের করোনা সার্টিফিকেট বিক্রির কারণে ইতালিতে বাংলাদেশ থেকে আগত কোনো ব্যক্তিকে এখন প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না, নিউ ইয়র্ক টাইমসে নেতিবাচক প্রবন্ধ হয় বাংলাদেশকে নিয়ে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শীর্ষ দেশগুলোতে বাংলাদেশ উঠে আসে শীর্ষে।
২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১২ জন সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইতিমধ্যে সংবাদপত্র, সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮‘র জন্য সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই কালো আইন বাতিলের দাবি তুলেছে।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আইনটি বাতিল হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে সমস্ত আইন মানুষের অধিকারকে খর্ব করে, যে সমস্ত আইন মানুষের স্বাধীনতার চেতনার যে বিষয়গুলো ছিলো বাক স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা সেগুলোকে খর্ব করে, হরণ করে। অবশ্যই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব যদি পাই কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সেগুলোকে অবশ্যই বাতিল করবো।