আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের উন্নয়নে যেমনি প্রয়োজন আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা তেমনি প্রয়োজন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোনো দেশেই প্রতিবেশীর সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক রেখে এগোতে পারে না। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এই দুই দেশের সম্পর্ক একাত্তরের রক্তের রাখিবন্ধনে আবদ্ধ। বর্তমানে এ বন্ধুত্ব ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চেয়ে সৌহার্দপূর্ণ।

মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া থাকলে অনেক অমীমাংসিত ইস্যু সহজে সমাধান সম্ভব যার প্রমাণ বাংলাদেশ-ভারত দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যা ছিটমহল বিনিময় সমাধান দু’দেশের পারস্পরিক আস্থাকে বাড়িয়ে তুলেছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, আপনাদের কোনো ভয় নাই। আপনারা এ দেশের উন্নয়নের অংশীদার। নিজেদের মাইনোরিটি ভাববেন না। এ শব্দটি আপনাদের মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখবে। তাই আসুন, উন্নয়ন মানবিকতা আর সম্প্রীতির শত্রু সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলতে আমরা শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করি।

তিনি বলেন, হাজার বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা এ দেশে পারস্পরিক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে বসবাস ও ধর্মচর্চা করে আসছে। সমকালীন বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন বাংলাদেশ। এখানে মসজিদ এবং পূজামণ্ডপ পাশাপাশি এবং একজন অন্য জনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়, বিপদে-আপদে সহযোগিতার সহমর্মী হয়। আবহমানকাল থেকেই চর্চা হয়ে আসছে এই বদ্বীপ জনপদে।

ধার্মিক মানেই পরমতসহিষ্ণু কথায় এবং আচরণে বিনম্র এবং উদার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ধর্মানুশীলন মানুষের মনের জানালা খুলে দেয়। জগতকে চেনার সুযোগ করে দেয়। অথচ ধর্মের নামে আজকাল কিছু বিভ্রান্ত মানুষের অপকর্ম আমাদের ব্যথিত করে। অসহিষ্ণুতা এবং সাম্প্রদায়িকতার স্থান পৃথিবীর কোনো ধর্মেই নেই। ধর্মের নামে যারা অধর্ম চর্চা করে, ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, এসব তাদেরই হাতিয়ার। যারা সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ কিংবা উগ্রতা চর্চা করে প্রকৃতপক্ষে তারা ধর্মের মূল শিক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে সকলের সমান সুযোগ এবং অধিকার রয়েছে আপনারা নিজেদের মাইনোরিটি ভাববেন না এ শব্দটি আমাদের আপনদের মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখবে। আপনারা দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। নাগরিক হিসেবে একজন মুসলমানের রাষ্ট্রের প্রতি যে অধিকার আপনারও সমান অধিকার। শেখ হাসিনার সরকার কথায় এবং কাজে একথা বিশ্বাস করে। তাই অসাম্প্রদায়িক চেতনা দিয়েই আমরা গড়ে তুলতে চাই এদেশের সমৃদ্ধির সোপান। মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে একটি অশুভ চক্র, একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এ দেশের হাজার বছরের ঐতিহ্যে আঘাত হানার অপচেষ্টা করে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, আপনাদের কোনো ভয় নাই। আপনারা এদেশের উন্নয়নের অংশীদার। আমরা একই আকাশের নিচে বাস করি। অভিন্ন বাতাসে শ্বাস গ্রহণ করি। অভিন্ন মেঘমালা থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টিতে আমরা ফসল ফলাই।

তাই বিভেদের প্রাচীর যারা গড়তে অপচেষ্টা করে তারা সফল হবে না কোনদিন। এদেশ সৌহার্দের দেশ। এদেশে প্রতিবেশীর মাঝে সহযোগিতার যে সম্পর্ক তা সামাজিক বন্ধন থেকেই উৎসারিত। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র হচ্ছে সামাজিক সখ্য এবং ঐক্য। আমরা একতা ধরে রেখেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে চাই, গড়ে তুলতে চাই দেশরত্ন শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, সুযোগ পেলেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আঘাত হানে নানান কৌশলে। তাদের অপচেষ্টা এখনো চলছে। তারা এখনও সক্রিয়। বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, সচেতন থাকতে হবে।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মজুমদার প্রমুখ।