মালিকানা নিয়ে কোনো জটিলতা নেই, তারপরও বনবিভাগের লক্ষাধিক একর জমি অবৈধ দখলে। বার বার নির্দেশ সত্ত্বেও সেই সকল জমি উদ্ধার হচ্ছে না। রেকর্ডভুক্ত বেদখলি ওই জমি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে মুজিববর্ষে লাগানো এক কোটি গাছ সংরক্ষণে সামাজিক সম্পৃক্ততার সুপারিশ করা হয়েছে।

সোমবার (১০ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাবের হোসেন চৌধুরী। বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মো. রেজাউল করিম বাবলু ও খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এক লাখ একরের বেশি বনভূমি বেদখলে রয়েছে। এই এক লাখ পুরোপুরি কাগজে-কলমে বনের জমি। এর বাইরেও প্রচুর বনভূমি দখলে রয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়কে এ সম্পর্কে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরা দেখতে চাই দখলদারদের উচ্ছেদে কতবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই কাজে জড়িত আইনজীবীদের কাজেরও মূল্যায়ন করতে চাই আমরা। বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বন বিভাগের কমপক্ষে এক লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি দখল শুধু গাজীপুরেই।

এক প্রশ্নের জবাবে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, অনেক জমি সিএস খতিয়ানে বন বিভাগের মালিকানায় ছিল। পরে এসএ খতিয়ানে সেটা আবার ডিসি অফিসের কাছে দেওয়া হয়। ডিসি অফিস সেগুলো আবার বিভিন্নভাবে লিজ দিয়েছে। এগুলো ফেরত আনতে হবে। সেজন্য আইনি প্রক্রিয়া বের করতে বলা হয়েছে। কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে এক কোটি গাছের চারা রোপণের কর্মসূচিতে সামাজিক সম্পৃক্ততার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ৩১ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৪৫৩টি চারা রোপণ করা হয়েছে। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশে এক কোটি গাছের চারা রোপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই চারা রোপণ করা হবে।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, এই গাছের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবতে হবে। কমিটি বলেছে জিআইএস ম্যাপিং করে কোন এলাকায় কী ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে, তা মূল্যায়ন করতে হবে। এর অর্থনৈতিক দিকেরও মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এসব গাছ রক্ষায় বিভিন্ন সমাজিক সংগঠনকে যুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তাহলে গাছগুলো রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে এই গাছের অর্থনৈতিক বেনিফিটটাও হিসেব করতে হবে। কমিটি সূত্র আরও জানায়, পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ের গবেষণাকে সরকারের কাজে সম্পৃক্ত করতে প্রতিবছর ‘পরিবেশ গবেষণা মেলা’ আয়োজনের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এই মেলার আয়োজন করা যায় কী না সে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।