গত বছর এবং তার আগের বছরে ছোট আকারে বেশ কিছু ফল পাওয়া যায়। চলতি বছর গাছ থেকে পাওয়া ফলের গড় ওজন দেড় কেজি।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ফলের সক্ষমতা থাকার আলোচনায় সারাবিশ্বে টক আতা অগ্রণী। এ অনন্য ভূমিকার কারণে টক আতাকে বিবেচনা করা হচ্ছে ভবিষ্যতের ফল হিসেবে। নাটোরে এবার টক আতার ফলনে সফলতা এসেছে। মডার্ন হর্টিকালচার সেন্টারে জার্ম প্লাজম সেন্টারের গাছ থেকে পাওয়া গেছে দেড় কেজি ওজনের টক আতা।
দেশের প্রতিথযশা ফল বিজ্ঞানী এস এম কামরুজ্জামানের কাছ থেকে আফ্রিকান জাতের দু’টো টক আতার গাছ পাওয়া যায়। তার তত্ত্বাবধানে বড় হতে থাকা গাছে ছয় বছর পরে খানিকটা সফলতা আসে।
গত বছর এবং তার আগের বছরে ছোট আকারে বেশ কিছু ফল পাওয়া যায়। চলতি বছর গাছ থেকে পাওয়া ফলের গড় ওজন দেড় কেজি। আশা করা হচ্ছে, এ ফলন অব্যাহত থাকবে। সেন্টারটিতে কলম ও বীজ থেকে চারা উৎপাদনের কার্যক্রম চলছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে চারা বিপণন শুরু হবে বলে জানা গেছে।
জার্ম প্লাজম সেন্টারের দু’টি টক আতার গাছে হাল্কা হলুদ রঙের আকর্ষণীয় ফুলের প্রাচুর্য থাকলেও আনুপাতিক হারে ফলের সংখ্যা কম। ফলের সংখ্যা বাড়াতে গবেষণা কাজ করছেন এস এম কামরুজ্জামান। তার মতে, ফলের পরাগায়নে সমস্যার কারণে এমনটা হচ্ছে। অবস্থা উত্তরণের চেষ্টা চলছে। একাধিক জাতের গাছের ফুলে ক্রস পরাগায়নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে তার ধারণা।
সারা গায়ে খাঁজ কাটা টক আতার গায়ের রঙ কাঁচা অবস্থায় সবুজ আর পাকা অবস্থায় হাল্কা হলুদ-সবুজের মিশ্রণে তৈরি। আর স্বাদ খানিকটা টক-মিস্টির সংমিশ্রন আঁশবহুল ফল। দক্ষিণ আমেরিকার এ ফলটি সর্সপ, গ্রিভিওলা, ক্যাস্টার্ড আপেল, পাউ পা, গায়াবানো এবং গুনাবান নামেও পরিচিত। কলাম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলায় এ ফল উৎপাদনে অগ্রগামী।
বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজে সমৃদ্ধ টক আতা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি এন্টি ক্যান্সার ফল হিসেবে বিবেচিত।
ইন্টারজার্নার অব মণিকুলার সায়েন্সের প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, টক আতা অন্ত্র পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। একটি গবেষণায় জানা গেছে, উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি থাকায় এ ফল চোখের সংক্রমণ চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। বিশ্বের সমাদৃত ম্যাগাজিন ফুড এন্ড ফাংশন এ প্রকাশিত লেখাতে বলা হয়েছে, টক আতার ফাইটনট্রিয়েন্টগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং টিউমারের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। সম্প্রতি মেক্সিকোর টেপিক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা টক আতার এসিটোজিন আবিষ্কার করেছেন-যা ক্যান্সারের শক্তিশালী কেমোথেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। আর নেব্রস্কা মেডিকের সেন্টারের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, টক আতার পাতার নির্যাস ক্যান্সার কোষের গ্লুকোজের বিস্তারকে রোধ করে।
টক আতা ফলের পাশাপাশি এর পাতাও উপকারী বলে বিবেচিত হচ্ছে। এর পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া হলে উপকৃত হওয়া সম্ভব। তাই পরম উপকারী এ ফলের গাছটি সবার বাড়িতে থাকা উচিৎ বলে মত প্রকাশ করেছেন এস এম কামরুজ্জামান।
তিনি বলেন, অপার সম্ভাবনাময় এ ফলটি হবে ভবিষ্যতের ফল।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্পের জাতীয় পরামর্শক হিসেবে কর্মরত এস এম কামরুজ্জামান জানান, প্রকল্পের পক্ষ থেকে পাবর্ত্য এলাকায় একশ’ টক আতার চারা রোপণ করা হয়েছে। আশাকরি, ঐ এলাকায় এর উৎপাদনে সুফল পাওয়া যাবে।
নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক স ম মেফতাহুল বারি বলেন, ফল চাষে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে একর প্রতি ফলের ফলন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে অবস্থান করছে। নতুন নতুন ফল উদ্ভাবন ও বাজারজাত করতে পারলে দেশের মানুষের রকমারি স্বাদের সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টি ও বিভিন্ন খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে রোগ মুক্ত জীবনের অধিকারী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে টক আতা অগ্রগামী ফল। এর উপাদানের মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাবলী থাকলে এ গাছের বিস্তার ঘটাতে সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসা উচিত।
লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ক্যান্সারের উপর পি এইচ ডি সম্পন্নকারী নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. এ কে এম আজাদুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন ফলের মধ্যে বিদ্যমান রকমারী উপাদানের উপস্থিতির কারণে রোগের নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। তবে আরো গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, টক আতার কোন উপাদানটি ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।”