ষড়ঋতুর বাংলাদেশের প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। কাঠফাটা রোদ আর গরমের জন্য গ্রীষ্মের খ্যাতি থাকলেও দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে প্রকৃতি সাজাতেও জুড়ি নেই। প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। তবুও দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে অপরূপ বাংলাদেশের প্রকৃতি। চলুন জেনে নেই গ্রীষ্মের সেসব ফুলের কথা।

কৃষ্ণচূড়া: কৃষ্ণচূড়া আমাদের দেশের অতি পরিচিত সাত-আটটি পাপড়িযুক্ত গ্রীষ্মের দৃষ্টিনন্দন গাঢ় লাল ফুল। কৃষ্ণচূড়া ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলসহ শহরাঞ্চলেও কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় লালে লাল হয়ে ফুটে থাকে অগ্নিরাঙা কৃষ্ণচূড়া ফুল।
কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘Delonix Regia’। গাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১১-১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে এর শাখা-পল্লব অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত। কুড়ি আসার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ভরে যায় ফুলে ফুলে।
আমাদের দেশে উজ্জ্বল লাল ও লাল হলদেটে-দু’ধরনের কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটতে দেখা যায়। তবে লাল কৃষ্ণচূড়াই সচরাচর চোখে বেশি পড়ে। আমাদের দেশে লাল হলদেটে কৃষ্ণচূড়া এখন প্রায় বিরল। লাল হলদেটে কৃষ্ণচূড়াকে অনেকে রাধাচূড়াও বলে।

সোনালু: সোনালু আমাদের দেশে অতি পরিচিত গ্রীষ্মর দৃষ্টিনন্দন পাঁচ পাঁপড়ির থোকাযুক্ত হলুদ রঙের ফুল। সোনালু ফুলের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল ধরা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মায়ানমার অঞ্চলে রয়েছে এর বিস্তৃতি। অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডের উষ্ণ অঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা যায়।
সোনালু ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘Cassia fistula’ এবং ‘Albizia inundata’। ইংরেজি ভাষায় সোনালু গাছকে বলা হয় ‘golden shower tree’ বা সোনালি ঝরনা গাছ। সোনালু গাছ সাধারণত ১৫-২০ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি সোনালু গাছ উৎপাদনের জন্য উপযোগী।
এ গাছের বাকল এবং পাতার ওষুধি গুণ আছে। এটি ডায়রিয়া ও বহুমূত্রের জন্য ব্যবহৃত হয়। সোনালুর ফুল ফল সবই বানরের প্রিয় খাবার। তাই কোনো কোনো এলাকায় সোনালুর ফলকে ‘বানরের লাঠি’ও বলা হয়।

জারুল: জারুল আমাদের দেশের অতি পরিচিত গ্রীষ্মর দৃষ্টিনন্দন ছয় পাঁপড়ির গোলাপি রঙের ফুল। পাতাঝরা জারুল গাছ শীতকালে পাতাশূন্য থাকলেও বসন্তে গাঢ় নতুন সবুজ পাতা গজায় এবং গ্রীষ্মে ফুল ফোটে। জারুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব গাছ।
বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুল গাছের দেখা মেলে। জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘Lagerstroemia Speciosa’। ইংরেজি নাম ‘Giant Crape-myrtle’। গাছ সাধারণত ১০-১৫ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতেও জারুল ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং শুকনো এলাকায়ও মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না।
গ্রীষ্মের শুরুতেই ফুল ফোটে এবং শরৎ পর্যন্ত দেখা যায়। ফুল শেষে বীজ হয়। বীজ দেখতে গোলাকার। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। দেশে সাধারণত নীলাভ ও গোলাপি-দুই রঙের ফুল দেখা যায়। জারুলের বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায়ও উপকারী।