ফরিদপুরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে পৃথিবীর জনপ্রিয় কাট ফ্লাওয়ার জারবেরার চাষ। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই যে কোন ফুলের দোকানে গেলে সহজেই নজর কাড়ে বাহারি রঙের জারবেরা। কৃষি বিভাগ বলছে, উচ্চমূল্যের এই ফুল চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে জারবেরার চাষ শুরু করেছেন ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গধাধর ডাঙ্গীর কৃষক আনোয়ার হোসেন। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি করা ৭ হাজার চারা ভারতের পুনে থেকে আমদানি করে চাষ শুরু করেছেন তিনি। পলি সেড, জমি তৈরি ও আমদানিকৃত চারাসহ সব মিলে খরচ হয়েছে ২১ লাখ টাকা। বর্তমানে ৫০ শতাংশ জমিতে লাল, সাদা, হলুদ, পিংক, ম্যাজেন্টা, কমলা, গোলাপি রঙের জারবেরা ফুল শোভা পাচ্ছে। চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যেই সফলতা পেয়েছেন এই চাষি। দুই দিন পরপর ফুল তুলে ঢাকার শাহবাগে বিক্রি করছেন তিনি। বাজারে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষক আনোয়ার এখন কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবুল বাশার জারবেরা সম্পর্কে জানান, জারবেরা ফুল গাছ থেকে তোলার ১০-১৫ দিন এবং গাছে ফোটা অবস্থায় ৩০-৪৫ দিন সতেজ থাকে। ফলে এর চাহিদা অনেক। সারা বছরই ফুল ফোটে। তবে এপ্রিল-মে হলো ভরা মৌসুম। সব ধরনের জলবায়ুতেই এরা বেঁচে থাকে। তবে উজ্জ্বল রোদের সাথেই সখ্য বেশি। বাংলাদেশে শীত ও শীতের শেষভাগে জরবেরা ভালো হয়। পলি সেড করে চাষ করলে সারা বছরই ভালো ফলন হয় বলে জানান এই কর্মকর্তা।
চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই বাগান থেকে ৩ বছরের বেশি সময় ফুল পাবো। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২০-২১ লাখ টাকা। ৭ হাজার চারা রোপণ করেছি। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ৫০-৬০টি জারবেরা ফুল হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।’
এই চাষি আশা করছেন, বছরে ৩০-৪০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ৩ বছরে ১ কোটি টাকার উপরে ফুল বিক্রি করতে পারবেন।
আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গধাধর ডাঙ্গী এলাকার একাধিক যুবক বলেন, ‘ফুল চাষে এতো লাভ বিশ্বাস করতে পারছি না। ইতোমধ্যে আনোয়ারের মতো অনেকেই এই ফুলের চাষ শুরু করেছে। আমরাও কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জারবেরা চাষ করবো।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘জারবেরা ফুলের চাষ গত বছর থেকে শুরু হয়েছে। জারবেরা উচ্চমূল্যের ফুল। এটি রফতানিযোগ্য। মূলত টিস্যু কালচার থেকে আনোয়ারের এই বাগানটি গড়ে তোলা। অন্য উপজেলাতেও জারবেরা চাষ শুরু হয়েছে। এ ফুল চাষ করে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছে। জারবেরা চাষে কেউ এগিয়ে এলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হয়।’