আনারস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ করে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত আনারস বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশে মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল জেলায় ব্যাপক আকারে আনারস চাষ হয়।

আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলও বটে। পুষ্টিগুণের দিক থেকেও আনারস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে জেনে নিন কীভাবে আনারস চাষ করে বাড়তি আয় করবেন।

মূলধন
এক বিঘা জমিতে আনারস চাষের জন্য প্রায় ২০ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকটাত্মীয়, সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) শরণাপন্ন হতে পারেন। এসব প্রতিষ্ঠান শর্তসাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ
আনারস চাষের আগে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে খুঁটিনাটি জেনে নিন। এছাড়া চাষসংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে।

জলবায়ু
আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় আনারস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে সেচের সুবিধা থাকলে মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়েও চারা লাগানো যায়।

মাটির প্রকৃতি
দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি আনারস চাষের জন্য বেশি উপযুক্ত।

জাত
হানিকুইন: পাকা আনারসের শাঁস হলুদ বর্ণের হয়। চোখ সূঁচালো ও উন্নত। গড় ওজন প্রায় ১ কেজি। পাতা কাঁটাযুক্ত ও পাটল বর্ণের। হানিকুইন বেশ মিষ্টি।

জায়েন্ট কিউ: পাকা আনারস সবুজাভ ও শাঁস হালকা হলুদ, চোখ প্রশস্ত ও চেপ্টা। গড় ওজন প্রায় ২ কেজি। গাছের পাতা সবুজ ও প্রায় কাঁটাবিহীন।

ঘোড়াশাল: পাকা আনারস লালচে এবং ঘিয়ে সাদা রঙের হয়। চোখ প্রশস্ত। গড় ওজন প্রায় ১.২৫ কেজি। পাতা কাঁটাযুক্ত, চওড়া ও ঢেউ খেলানো।

আনারস চাষে বাড়তি আয়
আনারস চাষে বাড়তি আয়

বংশ বিস্তার
স্বাভাবিক অবস্থায় আনারসের বীজ হয় না। তাই বিভিন্ন ধরনের চারার মাধ্যমে আনারসের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। সাধারণত পার্শ্ব চারা, বোঁটার চারা, মুকুট চারা ও গুঁড়ি চারা দিয়ে এর বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। এরমধ্যে পার্শ্ব চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।

জমি তৈরি
• মাটি ঝরঝরে করে চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল করে নিতে হবে। যাতে বৃষ্টির পানি কোথাও জমে না থাকে।
• জমি থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হবে।
• এক বেড থেকে অপর বেডের মধ্যে ৫০-১০০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হবে।

রোপণ
• এক মিটার প্রশস্ত বেডে ২ সারিতে চারা রোপণ করতে হবে।
• সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।

সার প্রয়োগ
ভালো ফলন পেতে চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে।

সেচ ও নিষ্কাশন
• শুষ্কমৌসুমে আনারস ক্ষেতে সেচ দেওয়া খুবই জরুরি।
• বর্ষা মৌসুমে গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে, সেজন্য নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

রোগ-বালাই ও প্রতিকার
জমিতে পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

পরিচর্যা
• চারা বেশি লম্বা হলে ৩০ সেন্টিমিটার পরিমাণ রেখে আগার পাতা সমান করে কেটে ফেলা।
• জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখা।

আনারস চাষে বাড়তি আয়
আনারস চাষে বাড়তি আয়

ফল সংগ্রহ
সাধারণত চারা রোপণের ১৫-১৬ মাস পর মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস গাছে ফুল আসে। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস পাকে। এসময় পাকা ফল সংগ্রহ করতে হয়।

বাজার সম্ভাবনা
টিনজাত খাদ্য হিসেবে আনারস সংরক্ষণ করা যায়। খাওয়ার পাশাপাশি আনারস দিয়ে জ্যাম, জেলি ও জুস তৈরি করা যায়। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে।