আপনি যদি শোনেন যে কোটি কোটি ডলারের প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে একটি নতুন ধরণের অ্যাপল বাজারে আসছে, আপনি ভাবতে পারেন যে আপনি হয়ত কানে ঠিকঠাক শোনেননি।
এবং পণ্যটি আসলে অ্যাপল আইফোন কিনা, এমন প্রশ্নও আসতে পারে।
তবে এখন যুক্তরাষ্ট্রে যে নতুন ধরণের আপেল বাজারে এসেছে সেগুলো পাড়ার মুদি দোকান থেকে শুরু করে বিদেশে নতুন গ্লোবাল বেস্টসেলার বা ‘কসমিক ক্রিস্প’ হয়ে উঠবে বলে আশা আপেল সমর্থকদের।
“তারকারা এই আপেলের জন্য লাইন ধরেছে,” মার্কিন ফল সংস্থা প্রোপ্রাইটারি ভ্যারাইটি ম্যানেজমেন্ট এর বিপণন পরিচালক ক্যাথরিন গ্র্যান্ডি বলেছেন।
কী এই নতুন আপেল?
নতুন জাতের আপেলটি বাজারে আনতে অন্তত এক কোটি ডলার নিয়ে কাজ করেছে প্রোপ্রাইটারি ভ্যারাইটি ম্যানেজমেন্ট।
হানিক্রিস্প এবং এন্টারপ্রাইজ নামের বিদ্যমান দুটি আপেলের মধ্যে ক্রস-ব্রিড বা প্রজনন ঘটিয়ে আপেলের নতুন এই জাতটি চাষ করা হয়েছে।
ক্রিস্পের প্রবক্তারা এই আপেলকে হলি গ্রেইল হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
বলা হয় এটি মিষ্টি, কচকচে এবং রসালো।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শীতল পরিবেশে এই আপেল এক বছর পর্যন্ত তাজা থাকবে।
ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহ-পরিচালক কেট ইভান্স বলেছেন, “কসমিক ক্রিস্প সহজেই ১০ থেকে ১২ মাসের জন্য রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা সম্ভব। যেখানে আপেলের মূল স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকে।”
আপনি ভাবতে পারেন যে এগুলো বেশি বেশি শোনাচ্ছে।
তবে ক্রিস্প হোম স্টেটের কয়েক শো আপেল চাষী চার কোটি ডলার বাজি ধরেছেন যে এই আপেল জনপ্রিয় হতে চলেছে।
যেভাবে শুরু
ক্রিস্পের গল্প শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে।
ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে প্রজনন কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল।
লক্ষ্য ছিল ওয়াশিংটনের তৎকালীন দুর্দশাগ্রস্ত আপেল কৃষকদের সহায়তা করার জন্য একটি নতুন জাতের আপেল উদ্ভাবন করা।
ওয়াশিংটন রাজ্যটি যুক্তরাষ্ট্রে আপেলের সবচেয়ে বড় উৎপাদক।
তাদের ফলন করা দুটি জাত – গোল্ডেন ডেলিশিয়াস এবং এবং রেড ডেলিশিয়াসের বিক্রি হঠাৎ করে কমতে শুরু করে।
কারণ গ্রাহকরা নতুন ধরণের আপেলের দিকে ঝুঁকে পড়ছিলেন, যা একইসঙ্গে মিষ্টি এবং দীর্ঘসময় টাটকা থাকে। যেমন পিঙ্ক লেডি, রয়্যাল গালা।
মূলত ডাব্লিউএ-থার্টিএইট হিসাবে পরিচিত, কসমিক ক্রিস্প জাতের এই আপেলকে ডাকা হয় ক্রিস্প নামে।
কেননা এর গাঢ় লাল জমিনের মধ্যে সাদা দাগ রয়েছে, অনেকটা রাতের আকাশের তারার মতো।
এখন কসমিক নামটিকেই ওই আপেলের ট্রেডমার্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়।
২০১৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে এই আপেল চাষ করা শুরু হয়।
ওয়াশিংটনের আপেল চাষীদের মধ্যে ক্রিস্পের চাহিদা এত বেশি ছিল যে কৃষকদের প্রথম চারা হাতে পেতে লটারি করতে হয়েছিল।
পরবর্তীতে ক্রিস্পের চারাগুলো বিশাল আকারে বিক্রি হতে শুরু করে।
ওয়াশিংটনে এখন প্রায় ১২ হাজার একর জমি এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি ক্রিস্প গাছ বেড়ে উঠছে।
ধারণা করা হয়, এই ফলন প্রকল্পটি বিশ্বের আপেল ইতিহাসের মধ্যে বৃহত্তম এবং দ্রুততম, যে কারণে চাষিদের সম্মিলিতভাবে তিন কোটি ডলার ব্যয় করতে হয়।
এই আত্মবিশ্বাসের বিনিময়ে, ওয়াশিংটন কৃষকদের ২০২২ অবধি বিশ্বব্যাপী ক্রিস্পের উৎপাদন ও বিক্রয় করার একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়েছে।
এবং ক্রিস্পটি প্রিমিয়াম জাত হিসাবে বিক্রি হচ্ছে, যা এর দাম দেখলে বোঝা যায়।
প্রথম ফলনের আপেল এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হচ্ছে প্রচলিত জাতের আপেলের চাইতে তিনগুণ বেশি দামে।
ওয়াশিংটন রাজ্য জুড়ে কয়েক শতাধিক আপেল চাষি, ক্রিস্প ফলানোর দিকে ঝুঁকছেন।
ওয়াশিংটন রাজ্যের পশ্চিমে, স্টেমিল্ট গ্রোয়ার্সের প্রধান পশ্চিম ওয়েস্ট ম্যাথিসন এখন তার বাগান থেকে আপেল তুলছেন।
তিনি বলেছিলেন যে নতুন জাতটি সম্পর্কে একটি নেতিবাচক দিক হলো এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপেল প্রিয় মানুষকে বিভক্ত করে দিতে পারে – যারা এটি কিনতে শুরু করেছেন, এবং যারা করেননি।
“তবে তারা যদি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ব্র্যান্ডগুলোয় আটকে থাকেন, যেখান থেকে কিনা সাধারণ ভোক্তারা সরে যাচ্ছে, তাহলে তাদের লাভের পরিমাণ অনেক কম এবং কখনও কখনও নেতিবাচক হয়।”
যাইহোক, অধ্যাপক ইভান্স ক্রিস্পের বাণিজ্যিক বিপণন নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। এত বেশি যে তিনি অ্যাপল কোম্পানির উপমা অনুসরণ করেন।
“আমি বলবো না যে এটি প্রথম আইফোন প্রবর্তনের মতো। বরং এটি আইফোনের সর্বশেষ আধুনিক সংস্করণের মতো”।