একবার কলা চারা রোপণ করলে একটানা তিন বছর ভালোভাবে ফলন দিতে পারে। যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব হয় না
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কলার চাষ। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় কলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। কৃষকেরা জানান, ধান আবাদ করে লোকসান হওয়ায় তারা কলা চাষে দিকে ঝুঁকছেন। কলা চাষ করে এ উপজেলায় সাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই।
উপজেলার একাধিক কলা চাষি জানান, কলা চাষ করে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। কলা চাষে প্রথম অবস্থায় সাথী ফসল হিসাবে মসলা জাতীয় ফসল, সকল ধরনের সবজি, ধানসহ অন্যন্যা ফসলও আবাদ করা যায়। কলা চারা গাছ লাগানোর অল্প দিনের মধ্যে বেড়ে উঠে এবং দ্রুত ফল পাওয়া যায়। বৈশাখ মাসে কলা চারা রোপণ করলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফলন পাওয়া যায়।
যে সব জমিতে পানি জমে না সে সব জমিতে কলা চাষ ভালো হয়। এক বিঘা জমিতে কলা চাষের জন্য জাতভেদে আড়াইশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ কলা চারা রোপণ করা যায়। একটি কলা গাছ ২ থেকে আড়াই মণ পর্যন্ত কলা দিতে পারে। এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও তিন-চার গুণ টাকার কলা বিক্রি করা যায়। একবার কলা চারা রোপণ করলে একটানা তিন বছর ভালোভাবে ফলন দিতে পারে। যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব হয় না।
চাষিরা জানান, এই এলাকার কলা ভালোমানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কলা ক্রয় করে ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্নস্থানে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাণাজ্যিক ভিত্তিতে চাঁপা, মহেরে সাগর, মানকিসহ বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করেন টাঙ্গাইলের চাষিরা। এসব জাতের কলা গাছ রোপণের অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়।
উপজেলার কড়য়া গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, এবার ৪ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সকল খরচ বাদে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকার মত লাভ হবে। কলা বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা হয় না। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে কলা পাইকাররা এসে যেমন নিয়ে যায় তেমনই স্থানীয় বাজারে কলা বিক্রি করা যায়।
চাষি সুমির হোসেন ও লিটন মিয়া বলেন, আমাদের অঞ্চলে কলার ভালো ফলন হয়। কলা আবাদ করে এখানকার চাষিদের কোনো লোকসান না হওয়ায় দিনদিন আগ্রহ বেড়েই চলছে। এখানকার প্রতি ছড়ি কলা প্রকারভেদে সাগর কলা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, সবজি কলা (আনাজ) ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাপা কলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়।
ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “উপজেলায় এবার ৭০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। কলা চাষে লাভবান হওয়ায় কলা চাষি ও কৃষকরা কলা চাষের দিকে আগ্রহ বেড়েই চলছে। কলা চাষে তেমন কোনো ঝামেলা না থাকার কারণে স্থানীয়রা কলা চাষ করেছে। চাষের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কলা চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শও প্রদান করছে। যাতে করে চাষিরা লাভবান হতে পারেন।”