‘পেয়ারার জন্য বিখ্যাত ঝালকাঠি এখন আমড়ার জন্য সুখ্যাতি অর্জন করা শুরু করেছে। ঝালকাঠি জেলার দুই শতাধিক গ্রামে আমড়া গাছ লাগিয়ে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন এ এলাকার চাষীরা। দেশের ভেতরসহ বঙ্গোপসাগর থেকে বড় বড় জাহাজে করে এখানকার আমড়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনটাই দাবি আমড়া চাষীদের। ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফজলুল হক বলেন, ঝালকাঠি জেলায় এ বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে আমড়ার চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১২ টন আমড়ার ফলন পাওয়া গেছে। অর্থকরী ফসল হওয়ায় কৃষকরা আমড়া চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতি বছরই আমড়ার ফলন বাড়ছে। ঝালকাঠির কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলীর আমড়া চাষী রিপন চৌধুরী ২০১৭ সালে ১০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে আমড়া গাছ লাগান। এ বছর কেমন লাভ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫০ মণের উপরে আমড়া বিক্রি করেছি। শ্রাবণ-ভাদ্র মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। তাই ওই সময়ে দামও ভালো থাকে। কিছু গাছে সারা বছর আমড়া ধরে।’ তবে আফসোস করে বলেন, ‘কুড়িয়ানা, আটঘর, ভীমরুলী কিংবা ডুমুরিয়া, বেতরা যেখানেই বলি না কেন বিপুল উৎপাদিত আমড়া সংগ্রহে এসব এলাকার ব্যবসায়ী-আড়তদার পর্যাপ্ত নয়। তৃণমূলে অর্থাৎ বাগান থেকে সংগ্রহ করা আমড়া প্রথম দিকে ৩০০-৩৫০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এখন তা সাড়ে ৪০০ থেকে ৮০০-এর কাছাকাছি। আমড়া পেয়ারার মতো অতি দ্রুত পচনশীল নয়, বিধায় এটি চাষে ন্যূনতম লাভ হয়।’ নৌকা বেয়ে ভীমরুলী ভাসমান হাটে যাচ্ছিলেন মলয় হালদার। তিনি বলেন, ঝালকাঠির আমড়া ভীমরুলী থেকে চলে যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরে।

এমনকি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে। তিনি জানান, গুণ-মান ভালো বলেই এখানকার আমড়ার চাহিদা আছে সারা দেশে। যারা আমড়া কেনেন সবাই চান এ অঞ্চলের আমড়া কিনতে। তবে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের আরও সহযোগিতা করার দাবি জানান কৃষক মলয় হালদার। আমড়া চাষের সমস্যার কথা জানিয়ে কৃষকরা বলেন, বর্ষা মৌসুমে এক ধরনের লেদাপোকা গাছের পাতা খেয়ে পাতাশূন্য করে ফেলে। এতে আমড়া চাষে ক্ষতি হয়। এ জন্য কৃষক-চাষী-বাগানিরা চান স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তা। কিন্তু অনেক সময় সাড়া পান না তেমন। তারা কীটনাশকমুক্ত আমড়া চাষাবাদে আগ্রহী। ভীমরুলীতে আড়ত রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি।

সবাই মূলত পেয়ারা কেনেন। তবে পেয়ারার শেষ সময়ে শুরু হয় আমড়ার ভরা মৌসুম। সেজন্য আড়তদাররা থেকে যান আগের মতোই। চলে আমড়া বিকিকিনির হাঁকডাক। ডুমুরিয়া, বেতলা, বারুহারসহ ঝালকাঠির বেশিরভাগ গ্রাম পেয়ারার পাশাপাশি আমড়া চাষের জন্যও বিখ্যাত। বর্তমানে এসব আমড়া বিক্রি হচ্ছে আটঘর, পিরোজপুরের কুরিয়ানাসহ ঝালকাঠির ভীমরুলী পানিতে ভাসমান বাজারে। তবে সবচেয়ে বড় ভাসমান বাজার ভীমরুলী। এখানকার জৌলুসই আলাদা। সকাল ৮টার মধ্যে বাজার বসে, বেচাকেনা চলে দুপুর পর্যন্ত। ছোট ডিঙিতে বা নৌকায় করে চাষী-বাগানিরা আসেন এখানে। আর ট্রলারে করে আড়তদাররা তা কিনে নেন। পুরো আশ্বিন-কার্তিক মাস জুড়েই আমড়া বিক্রিতে এসব হাট জমজমাট থাকবে। তবে পেয়ারার মতো এতটা গমগমে হবে না, তাও বা কম কী। ভীমরুলীর আড়তদার লিটন বলেন, শ্রাবণ মাস শেষ হলেই আমড়ার ভরা মৌসুম। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ মণ আমড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর যাচ্ছে বস্তা ভরে। দাম মণপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০-এর মধ্যে। আড়তদাররা জানান, চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে কাঁচা আমড়া ও প্রক্রিয়াজাত আমড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যায়। এছাড়া লন্ডনেও গত বছর থেকে এ অঞ্চলের আমড়া রফতানি হচ্ছে। কৃষকদের দাবি, সরকার থেকে যদি সরাসরি আমড়া কিনত অথবা বড় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে সরাসরি নিয়ে যেতেন তবে এর প্রচার-প্রসার আরও বাড়ত। বিদেশে রফতানির পরিমাণও বৃদ্ধি পেত। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আমড়ায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ আনেক পুষ্টিগুণ। আমড়াতে আঁশ থাকার কারণে হজমে সহায়তা করে। তাই মৌসুমের সময় নিয়মিত আমড়া খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর হয়। আমড়া কাঁচা, সরষে মাখা, রান্না ও মোরব্বা করে খাওয়া যায়।