সদ্য পদত্যাগ করা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছে না গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা। এ যেন গল্পের চোর-পুলিশ খেলা। পুলিশ কর্মকর্তারা ফোন দিলে, ফোনের লাইন কেটে দিচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ। আবার ফোন করলে কখনো ফোন বন্ধ করে রাখছেন। মেসেজ করলে রিপ্লাই করছেন, ব্যস্ত আছেন।
গতকাল বুধবার গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তার স্বাস্থ্য অধিদফতরে গেলেও তার দেখা পায়নি। তার আগের দিনই অবশ্য ডা. আজাদ পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে অধিদফতরেরই কথা হয়েছিল অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানার সঙ্গে।
ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, জেকেজিকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি শুধু মহাপরিচালকই জানতেন। ফলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক কিছু স্পষ্ট হবে।
তবে এই জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাকে সামনে পেতে হবে। কিন্তু কিছুতেই সাবেক এই মহাপরিচালকের মুখোমুখি হতে পারছেন না পুলিশ। যে দুই একটা কথা বলছেন সেটিও আবার ওভার ফোনে।
এ বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, জেকেজির বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তার ফোন কখনও ব্যস্ত, কখনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে এমন পরিস্থিতিতে ডা. আবুল কালাম আজাদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার নির্দেশনা চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) ই-মেইল ও কুরিয়ারের মাধ্যমে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) এ নোটিশটি পাঠান ন্যাশনাল ল-ইয়ার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম জুলফিকার আলী জুনু।
আইনি নোটিশে বলা হয়, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এত চরমে পৌঁছেছে যে, অধিকাংশ কোভিড হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই বলে জানা গেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই দুর্নীতি শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজির (আবুল কালাম আজাদ) আশীর্বাদপুষ্টদের কাছে করোনা যেন আশীর্বাদ। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী যেমন পিপিই, মাস্ক, ওষুধ সরবরাহ দিয়ে, এর শুরু বলা যায়। এসব অনিয়ম কর্তৃপক্ষের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কী আছে?
এতে বলা হয়, করোনাকালেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার সামগ্রীর কেনাকাটায় দুর্নীতি চরমে। এর দায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদত্যাগকারী সাবেক ডিজি এড়াতে পারেন না। করোনা মহামারির এই সংকটকালে পুরো জাতি যখন ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন, যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, যখন সরকারি হিসেব মতে দৈনিক প্রায় ৪০ জন করে করোনা রোগী মারা যাচ্ছেন। তখন স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের শামিল।
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত এপ্রিলে কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পায় জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা বা জেকেজি হেলথ কেয়ার।
কিন্তু সংস্থাটি ভুয়া কোভিড-১৯ সনদ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে গত জুন মাসে অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযানে নামে পুলিশ। ভুক্তভোগীদের মামলায় গ্রেফতার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরীসহ কয়েকজনকে।
আরিফুলের স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ ছিলেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার। তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান পরিচয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এরপর গত ১২ জুলাই গ্রেফতার করা হয় ডা. সাবরিনাকে। গ্রেফতারের আগে তিনি দাবি করেন, জেকেজিতে অনিয়ম দেখে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সংস্রব ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আজাদকে তা জানিয়েছিলেন।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জেকেজির মামলার তদন্ত ‘অনেকদূর’ এগিয়েছে। ‘শিগগিরই’ তারা অভিযোগপত্র দেবেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা রাসেল জানান, করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফর যে চিঠির মাধ্যমে জেকেজিকে অনুমতি দিয়েছিল, শুধু সেটি তারা পেয়েছেন। আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা হবে।