রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কিছুটা তিক্ত সম্পর্ক যাচ্ছে মিয়ানমারের। প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ প্রায় নিশ্চিত ছিল এই সমস্যা সমাধানে ভারত থেকে সক্রিয় সমর্থন পাবে। কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইস্যুতে ভারতের অবস্থান রীতিমতো অবাক করেছে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের।

নিজেকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু বলে দাবি করলেও ভারতের এমন আচরণ শীর্ষ নেতাদের ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে পুনরায় ভাবতে বাধ্য করে।

রোহিঙ্গা মুসলমান ইস্যুতে ভারত মিয়ানমারকে সমর্থন দেওয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ শরণার্থী সমস্যার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে শুধু সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ভারত, সামরিকভাবেও বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করছে যা বাংলাদেশের জন্য হুমকির বিষয়।

ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যকার সামরিক সম্পর্ক সক্রিয়ভাবে শুরু হয় ২০১৩ সাল। এর আগে এই দু’দেশের মধ্যে সীমিত আকারে সামরিক সহযোগিতা ছিল। ওই বছরই ভারত মিয়ানমারকে ৫শ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করে। এর আসল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের তৈরি অস্ত্র, যেগুলো কিনতে কোন দেশ আগ্রহী না ওইসব অস্ত্র রপ্তানি করা। আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল মিয়ানমারের উপর চীনের প্রভাব কমানো।

সামরিকভাবে মিয়ানমারকে যেসব সুবিধা দিচ্ছে ভারত

১) মিয়ানমার রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক সু-৩০ ফাইটার কিনবে। এই ফাইটারের জন্য মিয়ানমারের পাইলটদের সব ধরনের ট্রেনিং দিচ্ছে ভারত। এছাড়াও ভারত মায়ানমারের ফ্লিটের রক্ষণাবেক্ষণ ও স্পেয়ার পার্টস সাপ্লাই দিবে।

২) মিয়ানমারকে কিলোক্লাস সাবমেরিনও ক্রু’দের প্রশিক্ষণ প্রদান। ৩) ভারতের প্রযুক্তিতে তৈরি স্বল্প পাল্লার টর্পেডো সিস্টেম। ৪) MI-35 হেলিকপ্টারের ক্রু’দের ট্রেনিং ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি ৫) ভারতীয় সোনার সিস্টেম, ওয়ার গেমিং সফটওয়্যার। ৬) কিছু আর্টিলারি, মর্টার, নাইট ভিশন সিস্টেম, কমিউনিকেশন সরঞ্জাম, রাইফেল সরবরাহ করেছে।

ভারত চাচ্ছে এসব সামরিক চুক্তি দিয়ে মিয়ানমারকে হাতে রাখতে ও চীনের প্রভাব খর্ব করতে এবং বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে চাপে রাখতে। কারণ বাংলাদেশ একচেটিয়া চীনের প্রভাব ভারতের প্রচুর ‘মাথা ব্যথার’ কারণ। বাংলাদেশে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সামরিক বাহিনীর অস্ত্র সরবরাহেও চীনের এক চেটিয়া প্রাধান্য। চীনের সাথে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তিতে ভারত বরাবরই ঈর্ষণীয়! বাংলাদেশের সবশেষ সাবমেরিন ক্রয় চুক্তি নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিল ভারত।

ভারত চাচ্ছে তাদের দেশে বানানো নিম্ন মানের অস্ত্র বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে। ৫শ’ মিলিয়ন ডলার সামরিক ঋণ দিতেও প্রস্তুত ছিল দেশটি। কয়েকদফা দেন-দরবারও করা হয়। তবে সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এখন মিয়ানমারকে অস্ত্র-প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে চাচ্ছে তারা।

মিয়ানমারের সাথে ভারতের এইরকম স্পর্শকাতর সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য সরাসরি হুমকি। শুধু তাই নয়, মোটা দাগে ভারত তার ‘পরম মিত্র’ বাংলাদেশের কাছে নিজের ইমেজ নষ্ট করছে বলেও ধারণা অনেকের। এছাড়া বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরাও ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছে।

সময় টেলিভিশন, ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম