১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর খ্রিস্টান পাদ্রিদের থেকে নিজ অর্থায়নে আয়াসোফিয়াকে কিনেছিলেন সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ। তারপর তিনি মসজিদের হিসেবে আয়াসোফিয়ার সম্পদকে ওয়াকফ করেন।
সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার এক অনুসন্ধানীমূলক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত শুক্রবার (১০ জুলাই) ১৯৩৪ সালে মসজিদ থেকে আয়াসোফিয়াকে জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্তকে বাতিল ঘোষণা করে তুরস্কের প্রশাসনিক আদালত। এরপরই এক রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করে আয়াসোফিয়াকে পূনরায় মসজিদে রূপান্তরের যুগান্তকারী নির্দেশনা দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান।
আয়াসোফিয়াকে পূনরায় মসজিদে রূপান্তরের বিরোধিতা করে আসছে আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও গ্রিসসহ বিশ্বের খৃষ্টান নেতৃবৃন্দ।
তাদের এই বিরোধিতাকে অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন উসমানী সাম্রাজ্যের ইতিহাস বিষয়ক গবেষকগণ। তারা জানান, ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর আয়াসোফিয়াকে খ্রিস্টান পাদ্রিদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ। এবং তিনি তা মসজিদের জন্যই ওয়াকফ করেন। সুতরাং আয়াসোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহারে নীতিগত কোনো বিরোধ থাকলো না।
১০ জুলাই আয়াসোফিয়াকে পূনরায় মসজিদে রূপান্তরের সিদ্ধান্তের পর ২৬ বছর আগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের দেওয়া এক সাক্ষাৎকার টাইমলাইনে আসে।
কুয়েতের ‘মুজতামা’ পত্রিকায় ১৯৯৪ সনে এপ্রিল (১০৯৭তম) সংখ্যায় প্রকাশিত সাক্ষাতকারটিতে এরদোগান বলেছিলেন, “যত বাধাবিপত্তি আসুক না কেনো আয়াসোফিয়া-কে গীর্জায় রূপান্তরিত করতে দেওয়া হবে না। আয়াসোফিয়া-কে পুনরায় গীর্জায় রূপান্তরিত করা নিছক কল্পনা মাত্র।”
ওই সাক্ষাতকারে এই কথার ব্যাখ্যায় এরদোগান বলেছিলেন, “আয়াসোফিয়াকে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে এবং এটি এমনই(মুসলমানদের জন্য ওয়াকফকৃত) থাকবে।”
তিনি বলেন, “এব্যাপারে সকলেই অবগত যে, সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ ইস্তাম্বুল বিজয়ের সময় কোনো গীর্জা দখল করেননি, এমনকি আয়াসোফিয়াকে তিনি নিতান্তই নিজের অর্থ সম্পদের বিনিময়ে ক্রয় করে মসজিদে রূপান্তর করে মুসলিম উম্মাহর জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। আর তিনি (সুলতান ফাতিহ)বলেছিলেন, “এটিকে অন্য উদ্দেশ্য যদি কেউ ব্যবহার করতে চায়, তবে তার উপর আল্লাহর এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর লা’নত”
আধুনিক যুগে গীর্জা কিনে মসজিদে হিসেবে ব্যবহারের ঘটনা অনেক। খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরা দিনদিন প্রার্থনায় অলস হয়ে যাওয়ায় খালি হয়ে যায় বিভিন্ন গীর্জা। পরে মুসলমানগণ তা কিনে নিয়ে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করেন।
এমনই একটি মসজিদ হলো নিউইয়র্ক ব্রুকলিন মসজিদ। ১৯০৭ সালের আগে এটি গীর্জা হিসেবে ব্যবহার হতো। মুসলিমরা তা ক্রয় করে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।
গীর্জাকে ক্রয় করে মসজিদে রূপান্তরের তালিকায় রয়েছে আয়ারল্যান্ড ডাবলিন মসজিদ। এই মসজিদটি আগে একটি গীর্জা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৩শ শতাব্দীর ইংরেজদের গীর্জার শৈলীতে ১৮৬০-এর দশকে ডোনোর প্রেসবিটারীয় গীর্জাটি নির্মিত হয়। ১৯৮৩ সালে এটি আয়ারল্যান্ড ইসলামী ফাউন্ডেশন কিনে নেয় ও মসজিদে রূপান্তরিত করে।
এ তালিকায় আরো রয়েছে জার্মানির ওয়েস্টফালিয়ার ফেইজ ঈমান মসজিদ। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের একদল ব্যবসায়ী জার্মানির ওয়েস্টফালিয়া নর্থ রাইল প্রদেশের হেগেন শহরে একটি প্রাচীন গীর্জা ক্রয় করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করে।
পাকিস্তানের মুসলিম ব্যবসায়ী এই গীর্জাটি ৩ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড দিয়ে ক্রয় করে। জেসুস হিলিগেন নামক প্রাক্তন গীর্জাটির নাম পরিবর্তন করে ‘ফেইজ ঈমান’ নামকরণ করা হয়।
এছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে খৃষ্টানদের থেকে গীর্জা কিনে মসজিদ বানানোর ঘটনা অহরহ। কিন্তু আয়াসোফিয়া দীর্ঘ ৫০০ বছর মসজিদ হিসেবে থাকার পরও অনৈতিকভাবে এটাকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। দীর্ঘ ৮৬ বছর পর তুরস্কের শীর্ষ আদালতের রায়ের মাধ্যমে আয়াসোফিয়াকে পূনরায় মসজিদে রূপান্তরে পশ্চিমা বিশ্বের মায়াকান্না মুসলিমদের মাঝে প্রশ্ন সঞ্চার করে। ।