মশলা হিসেবে লবঙ্গ সকলের পরিচিত। এ মশলার আদি বাস ইন্দোনেশিয়া হলেও বর্তমানে এটি পৃথিবীর সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে জাঞ্জিবার, ইন্দোনেশিয়া ও মাদাগাস্কারে ব্যাপকভাবে লবঙ্গ চাষ করা হয়। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকাতেও লবঙ্গের চাষ হয়ে থাকে। অনেক এলাকায় ‘লবঙ্গ’ কে আবার `লং` নামেও পরিচিত। তবে এ মশলার রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। জেনে নেয়া যাক এ মশলা সম্পর্কে-
পুষ্টিমান
এক টেবিল চামচ পরিমান লবঙ্গ অর্থাৎ প্রায় ছয় গ্রাম লবঙ্গ থেকে পাওয়া যায় ২১ ক্যালরি শক্তি। এতে কোন কোলেস্টেরল নেই। ফ্যাট আছে এক গ্রাম, সোডিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, ফাইবার দুই গ্রাম। প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, আয়রন, থায়মিন, জিংক, রিবোফ্ল্যাভিন, এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে এতে।
ব্যবহার
লবঙ্গকে আস্ত অথবা গুঁড়ো অবস্থায় রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এর গন্ধ কড়া বলে অল্প পরিমাণে দিলেই চলে। ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের প্রায় সব দেশেই এর ব্যবহার রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন সিগারেটে সুগন্ধি হিসাবে লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়। চীনা ও জাপানিরা ধুপ হিসাবে লবঙ্গ ব্যবহার করে থাকে। ভারতীয় উপমহাদেশের খাদ্যে দীর্ঘকাল ধরে লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়ে আসছে। লবঙ্গের সুগন্ধের মূল কারণ “ইউজেনল” নামের যৌগ। এটি লবঙ্গ থেকে প্রাপ্ত তেলের মূল উপাদান এবং এই তেলের প্রায় ৭২-৯০% অংশ জুড়ে ইউজেনল বিদ্যমান। এই যৌগটির জীবাণুনাশক এবং বেদনানাশক গুণ রয়েছে।
ভেষজগুণ
যুগ যুগ ধরে আর্য়ুবেদিক শাস্ত্রে লবঙ্গের বহুল ব্যবহার রয়েছে। দাঁতের ব্যথায় উপকারি। লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা দূর করে, মাড়ির ক্ষয় নিরাময় করে, প্রায় সব টুথপেস্টের কমন উপকরণ এই লবঙ্গ। লবঙ্গের সুগণ্ধ বমিবমি ভাব দূর করে। লবঙ্গ কিছুটা সতেজও করে তোলে। সর্দি-কাশি খুব কমন একটা ব্যাপার। সর্দিকাশির মহৌষধ হিসেবে লবঙ্গ বহুবছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাইনোসাইটিস রোগে লবঙ্গ খুব উপকারি। সাইনোসাইটিসের রোগীদের চিকিৎসায় লবঙ্গ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পেট ফাঁপা রোগ নিরাময়ে লবঙ্গ ব্যবহার হয়। সাধারণত চায়ের সাথে লবঙ্গ মিশিয়ে পান করলে পেট ফাঁপা থেকে উপসম পাওয়া যায়। লবঙ্গ কামোদ্দীপক। এর সুবাস অবসাদ দূর করে, শরীর ও মনের ক্লান্তি ঝরিয়ে দেয়। যৌনরোগেও এর বহুল ব্যবহার আর্য়ুবেদিক শাস্ত্রে রয়েছে।মানসিক চাপ লাঘব করে। তুলসি, পুদিনা, এলাচ ও লবঙ্গ মেশানো জলের শরবত মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। লবঙ্গ ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ব্রণের দাগ দূর করতেও লবঙ্গের পেস্ট খুব কার্যকর। লবঙ্গ শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে রক্তকে পরিশোধন করতে ভূমিকা রাখে। লবঙ্গের তেলের জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে। এটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করতে খুবই কার্যকর।