আজাদ কাশ্মীরে বিশাল একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য চীনের সাথে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে ইমরান খান সরকার। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, হিমালয় অঞ্চলে তিন দেশ কিভাবে একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই বিতর্কিত এলাকায় বর্তমানে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্প্রতি সেখানে সীমান্ত এলাকায় চীন ও ভারতের সেনাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে।

পাকিস্তান এবং চীনের থ্রি গর্জেস কর্পোরেশানের সহযোগী কোম্পানি কোহালা হাইড্রোপাওয়ার কোম্পানি গত মাসের শেষের দিকে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির অধীনে ১,১২৪ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মিত হবে, যেটা হবে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যাণ্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে এই প্রকল্পটি নির্মিত হবে।

পাকিস্তানের কোন একক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে এটা হবে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পাকিস্তান শাসিত আজাদ কাশ্মীরে গত দুই মাসের মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রকল্প, যেটাতে অর্থায়ন করছে চীন। মে মাসে চীনের পাওয়ার কন্সট্রাকশান কর্পোরেশানকে যৌথ প্রকল্পের অংশ হিসেবে দায়ামের ভাশা ড্যাম নির্মাণের কাজ দেয়া হয়। চীন সীমান্ত থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে নির্মিতব্য এই বাঁধটিতেও অর্থায়ন করবে চীন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোহালা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়নে চীনের রাজি হওয়ার কারণ হলো কাশ্মীর অঞ্চল দিয়ে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের ব্যাপারে ভারতের আপত্তিকে ঠাণ্ডা করে দিতে চায় তারা। ভারত বলেছে, এই অঞ্চলে কোন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না, কিন্তু সাম্প্রতিক চীন-পাকিস্তানের চুক্তিতে ভারতের বক্তব্যকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে।

সংঘাতের শুরু হয়েছে মে মাসে, যখন হিমালয় অঞ্চলের লাদাখে চীন আর ভারতের সেনারা পরস্পরের বিরুদ্ধে হাতাহাতি ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। জুনে ভয়াবহ সংঘর্ষের আগে ভারত সেখানে দারবুক-শায়ক-ডিবিও সড়ক চালু করেছিল। ২৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি শুরু হয়েছে লাদাখের লেহ শহর থেকে এবং এই সড়ক দিয়ে ভারতীয় সেনারা সহজেই কারাকোরাম গিরিপথের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান নিতে পারে। এই গিরিপথটি লাদাখকে চীনের জিনজিয়াং স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল থেকে আলাদা করেছে এবং এটা একই সাথে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের একটি প্রধান রুট।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের অধ্যাপক মোহান মালিক বলেন, ভারতের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়াটা চীনের ‘ভারত নিয়ন্ত্রণ’ নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিক্কিকে তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লীকে উত্যক্ত করার জন্যেই’ বেইজিং সিপিইসির অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে পাকিস্তান শাসিত আজাদ কাশ্মীরের ড্যাম ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

মালিক আরও বলেন যে, চীন-ভারত সামরিক সঙ্ঘাত থেকে সবেচয়ে বড় উপকার পাচ্ছে পাকিস্তান। তিনি বলেন, “চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুই ফ্রন্টে একসাথে যুদ্ধ করার বিষয়টি নয়াদিল্লীর ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম”।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর ও নিক্কি এশিয়ান রিভিউ