১২ বছরের বাসিম হাসপাতালের শুয়ে আছে, তার বাবা আয়াজ আহমদ তাকে পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াত তিলাওয়াত করতে বলছেন।
’পাপা, আমি কি মারা যাচ্ছি?’ বাসিম শান্তভাবে জানতে চাইল।
বাসিম তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বিস্ফোরণে তার দেহের ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে। চিকিৎসকেরা আয়াজকে বলে দিয়েছেন, তার ছেলে বাঁচবে না। ঘনবসতিপূর্ণ দখলকৃত কাশ্মীরের শ্রীনগরে ১৩ ঘণ্টার এক বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল দেখতে যে শত শত লোক গিয়েছিল, তাদের একজন ছিল এই বাসিম। ওই ঘটনায় দুই স্বাধীনতকামী যোদ্ধা নিহত, ১১টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চারটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সম্ভবত পড়ে থাকা একটি বিস্ফোরক বিস্ফোরিত হয়েছিল। এতে ৫ লোকের ওপর একটি বাড়ি ধসে পড়ে। ওই ৫ জনের ৪ জনই মারা যায়। কেবল বাসিম এখনো বেঁচে আছে।
কোভিড-১৯-এর বিস্তারের পর ভারত সরকার দখলকৃত কাশ্মীরে লকডাউন আরোপ করার পর থেকে ওই এলাকায় সহিংসতা বেড়ে গেছে।
মানবাধিকার গ্রুপগুলোর জোট জম্মু কাশ্মির কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটির নেতারা বলছেন, সংঘর্ষে চলতি বছর দুই শ’র বেশি লোক নিহত হয়েছে। অথচ ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে নিহত হয়েছিল মাত্র ৯৫ জন। অধিকার কর্মীদের বক্তব্য অনুসারে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর অভিযান বাড়ানোর কারণেই হত্যাকাণ্ড বাড়ছে।
কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার আগে ভারত দখলকৃত কাশ্মীরের অধিবাসীরা বলছিলেন যে ভারতীয় বাহিনী তাদের অভিযানে প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। বিশেষ করে তরুণরা ভারতীয় বাহিনীর ওপর ইট-পাথর নিক্ষেপ করে স্বাধীনতাকামীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করে।
মহামারির ভয়ে লোকজন বাড়িতেই থাকে। সারা দুনিয়া এখন করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি এখন অন্য দিকে। কোভিড-১৯-এর কারণে বিদেশী সাংবাদিকেরাও এদিকে আসতে চায় না।
আবার এই অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বা পুলিশপ্রধান, কেউ বারবার অনুরোধ করলেও প্রশ্নের জবাব দেন না।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ভয়েস অফ আমেরিকাকে এক শীর্ষ মেডিকেল বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনার সময় অভিযান চালানো মানে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করা। কারণ বিপুলসংখ্যক লোক তখন ঘটনাস্থল থেকে চিকিৎসা নিতে আসে। তিনি বলেন, হাসপাতালে ছুটে আসার সময়ও অনেকে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়। এ কারণেও এখানে করোনার বিস্তার ঘটছে বেশি।জেকেসিসিসির চেয়ারম্যান ও নিজে রাফটো পুরস্কারজীয় মানবাধিকার আইনজীবী পারভেজ ইমরোজ বলেন, করোনা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ভারত সরকার অজনপ্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বা কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই আইন পাস করছে।
এ ধরনের একটি অজনপ্রিয় আইন হলো রেসিডেন্সি মর্যাদা দেয়া। যারা এখানে ১৫ বছরের বেশি সময় বাস করছে, তাদেরকে এই রাজ্যে স্থায়ি বাসিন্দার মর্যাদা প্রদান করার ব্যবস্থা করা। কাশ্মীরীরা আশঙ্কা করছে, এর ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যে অন্যান্য রাজ্যের লোকজনে প্লাবিত হয়ে যাবে।