কারগার মানে যেখানে অপরাধীদের শাস্তিমূলকভাবে বন্দি করে রাখা, বিভিন্ন কাজ করানো। বিশ্বের অনেক দেশেই কারাগার বলতে এরকমটাই বুঝানো হয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন সব কারাগারও রয়েছে যেখানে বাইরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মতোই চলছে সবকিছু। যেমন- বন্দীদের পাহাড়া দেওয়ার জন্য কোনো প্রহরী নেই, রয়েছে মার্কেট সহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা। এমনকি একটি কারাগারে মাত্র দুই জন অপরাধী থাকার সুবিধা সহ অদ্ভুদ নানান বিষয়ও রয়েছে। তেমনি কয়েকেটি কারাগার সম্পর্কে আজ জেনে নেয়া যাক-
অ্যারানহুয়েজ
এই কারাগারটি স্পেনে অবস্থিত। এখানে একজন অপরাধী তার পুরো পরিবারের সাথে সাজাকালীন পুরো সময়টা থাকতে পারবেন। এখানে শিশুদের জন্য দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ডিজনি কার্টুনের বিভিন্ন চরিত্র। আছে খেলার মাঠ ও নার্সারি। শিশুদের আটক বাবা-মার সঙ্গে থেকে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এ ব্যবস্থা। মাদ্রিদ থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত এই কারাগারে একসাথে ৩৬টি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
সেরেসো সেটুমাল
এই কারাগারটি মেক্সিকোতে অবস্থিত। আমাদের দেশে সাধারণত আসামীদের মধ্যে প্রতিদিনই বিভিন্ন বিষয়ে মারামারি লেগেই থাকে। অথচ মেক্সিকোর এই কারাগারটিতে গত ১০ বছরে আসামীদের মধ্যে কোনো ধরনের মারামারির ঘটনা ঘটেনি। তবে যে বিষয়টি সবচাইতে বেশি অবাক করে সেটি হলো এই কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামীরা কারাগার ছেড়ে যেতে চায় না। এখানকার সহজ-সরল জীবন, মজার মজার সব খাবার-দাবার, বিনোদনমূলক কর্মকান্ডই এর মূলে রয়েছে।
স্যান পেদ্রো
এটি বলিভিয়ার একটি কারাগার। এই কারাগারের ভিতরে গেলে যে কারও চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে গেলেই চোখে পড়বে ভেতর ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে, মার্কেটে বেচা-বিক্রিতে ব্যস্ত সব দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল সবই আছে এখানে। আজব এই জেলখানায় নেই কোনো প্রহরী, নির্দিষ্ট কোনো পোশাক, এমনকি জানালায় লোহার গরাদও নেই এই জেলখানায়। এখানকার সেলগুলোতে আছে ব্যক্তিগত গোসলখানা, রান্নাঘর, এমনকি টিভিতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি চ্যানেল দেখার সুযোগ। তবে এজন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়। এজন্য তাদের সবাইকে জেলখানার ভেতরে বিভিন্ন দোকানে কাজ করে আয় করতে হয়।
হালদেন
এটি নরওয়ের বিলাসবহুল একটি কারাগার। এই কারাগারের প্রত্যেক জন্য রয়েছে আলাদা স্পেশাল স্যুট। প্রতিটি স্যুটে আছে বাথরুম আর গরাদবিহীন জানালা। আছে নিজস্ব রেকর্ডিং স্টুডিও, দেয়ালজুড়ে অতিকায় ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি ও বিনোদনের সর্বোচ্চ সুবিধা। কয়েদখানার দেয়ালে রয়েছে ১০ লাখ পাউন্ড মূল্যমানের চিত্রকর্ম। এখানে সর্বমোট ২৫২ টি স্যুট রয়েছে।
ক্রেস্টি
রাশিয়ার এই কারাগারটিতে এক একজন কয়েদির জন্য চার বর্গমিটার জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। কয়েদিরা সপ্তাহে মাত্র ১৫ মিনিট সময় পায় গোসল করার জন্য। তিন হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই কারাগারে একসাথে প্রায় দশ হাজার কয়েদি রয়েছে।
সার্ক প্রিজন
গার্নজি দ্বীপের একটি কলোনি সার্ক-এ আছে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কয়েদখানা। ১৮৫৬ সালে তৈরি এই কারাগারে একসঙ্গে থাকতে পারে মাত্র দুজন।
সেবু
ফিলিপাইনে এই কারাগারটি অবস্থিত। খুনি, মাদক চোরাকারবারিদের নাচ দেখতে হলে যেতে হবে সেবু কারাগারে। এমনিতে দৌড়, বাস্কেটবল খেলা কিংবা ভারোত্তোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল কয়েদিদের শরীরচর্চা। কিন্তু কারাজীবন নিয়ে তৈরি ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ সিনেমাটি দেখে অনুপ্রাণিত হন সেবু কারাগারের প্রধান ওয়ার্ডেন। তার আইডিয়াতেই যুক্ত হয় নাচ। দেড় হাজার কয়েদি এখানে নাচে অংশ নিতে পারে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা চ্যারিটির জন্যও তারা নাচে। এর জন্য মজুরিও আছে। নাচের পরে দর্শকদের জন্য রয়েছে কয়েদিদের সঙ্গে ছবি তোলা আর টি-শার্ট কেনার সুযোগ।