‘ঠাক ঠাক’ মানে গুলির আওয়াজ। ভারত দখলকৃত কাশ্মীরের সোপোরে গত বুধবার (১ জুলাই) গুলিতে নিহত ‘পাপা’ অর্থাৎ দাদুর রক্তমাখা দেহের বুকের উপরে বসে-থাকা আয়াদের ছবি ছড়িয়ে গিয়েছে গোটা দুনিয়ায়। বাড়ির লোকেরা বলছেন, আয়াদ এখনও মাঝে মাঝেই বলছে, কী ভাবে ‘ঠাক ঠাক’ করা হয়েছিল দাদুকে। তাদের ভয়, এই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি হয়তো সারা জীবন ভোগাবে তাকে।

কিন্তু কে গুলি করল ৬৫ বছরের বশির আহমেদ খানকে? এই প্রশ্নই বারবার তুলছে পরিবার। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা আর ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপি) গুলি-যুদ্ধের মধ্যে পড়েই বশির মারা গিয়েছেন— নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের এই ব্যাখ্যা তারা চোখ বুজে মানতে নারাজ।

নিহতের ছেলে গত কাল অভিযোগ করেছিলেন, গাড়ি থেকে নামিয়ে তার বাবাকে গুলি করেছে ভারতীয় বাহিনীই। যা ধামাচাপা দেয়ার জন্য খণ্ডন করতে গতকাল ফের বিবৃতি দিয়েছে ভারতীয় সিআরপি-র এডিজি জুলফিকার হাসান। তিনি দাবি করেন, ‘‘সম্পূর্ণই অসত্য কথা। কিছু লোক ঘটনাটাকে অন্য চেহারা দিতে চাইছে।’’

কিন্তু বশিরের ছেলেমেয়ের প্রশ্ন, গুলিগোলার মধ্যে পড়ে গেলে কেউ গাড়ি থেকে নামতে যাবেনই বা কেন? বিশেষত সঙ্গে যখন একটা শিশু রয়েছে! তাই পরিবারের লোকেরা স্পষ্ট বলেছেন, ভারতীয় বাহিনীর হাতেই যে বশির হত্যার শিকার হন, ছোট্ট আয়াদের মুখেই সেই কথা তারা শুনেছেন।

বশিরের ছেলে, ২৫ বছরের সুহেল আহমেদ খান ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বললেন, ‘‘একটা শিশু কেন বাড়িয়ে বলবে? সে যা দেখেছে, তা-ই বলছে। তা-ও আমি আমার ভাগ্নের কথা বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু সোপোরের থানায় গিয়ে দেখলাম, বাবার গাড়িটায় একটা আঁচড় পর্যন্ত নেই। বাবা যদি গুলি-যুদ্ধের মধ্যে পড়েই মারা যায়, তা হলে গাড়ির কাচ ভাঙবে, ভেতরে রক্তের দাগ থাকবে। সে সব কিচ্ছু নেই।’’

ভারতীয় বাহিনীর হত্যার শিকার শহীদ বশিরের স্ত্রী বারামুলার মহিলা থানার অবসরপ্রাপ্ত এসএইচও। এখন আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। কাল, বৃহস্পতিবার তার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। বশিরের বাড়ির গৃহ-সহায়িকা লকডাউনে আটকে রয়েছেন সোপোরে, নিজের বাড়িতে। তাকেই গত কাল আনতে যাচ্ছিলেন বশির। ছেলে জানালেন, সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ থানা থেকে ফোন করে বলা হয়, বশির দুর্ঘটনায় পড়েছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখতে পান গুলিবিদ্ধ দেহ।

পরিবারের প্রতি সমবেদনার পরিবর্তে উল্টো হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে কাশ্মীরে অবস্থানরত ভারতীয় পুলিশ। তাদের দাবি, খুনের ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে সিআরপি-র বিরুদ্ধে। পরিবার এবং প্রতিবেশীরা না কি গুজব ছড়াচ্ছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলারও হুমকি দেয় ভারতীয় পুলিশ।